জাতীয় শিক্ষানীতিতে বাংলাদেশে বসবাসরত প্রতিটি জাতিসত্তার শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাঙালি ছাড়া অপরাপর জাতিসত্তার শিশুদের নিজ মাতৃভাষা শিক্ষার উদ্যোগ এখনো সবে ‘হামাগুড়ি’ দেওয়ার পর্যায়ে রয়ে গেছে।
চাকমাসহ আরও দু-একটি জাতিসত্তার শিশুরা নামমাত্র সে সুযোগ পেলেও অন্যদের ক্ষেত্রে একেবারেই সেই উদ্যোগ দৃশ্যমান নেই। তবে আশার কথা হলো, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেন, বিভিন্ন জাতিসত্তার শিশুদের তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাচ্ছে, বাঙালি ছাড়া বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে ৪৮টি। প্রায় বেশির ভাগ জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা রয়েছে। কিন্তু নিজস্ব হরফ না থাকায় সেগুলোর লিখিত রূপ নেই। ফলে এসব ভাষা রক্ষার সবচেয়ে বড় বাধা হলো নিজস্ব বর্ণমালা ও অভিধান তৈরি করা। এর জন্য সরকারি পর্যায়ের গবেষণা ও উদ্যোগের বিকল্প নেই।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ওঁরাও বা উরাও জনগোষ্ঠী তাদের শিশুদের জন্য মাতৃভাষা কুরুখ শেখানোর জন্য একটি স্বেচ্ছাশ্রমের বিদ্যালয় চালু করেছে। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপজেলার দেওরাছড়া চা-বাগানের বাবনটিলায় খোলা উঠানে এই শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর নাম ‘কুরুখ ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র’।
কুরুখ ভাষার এই চর্চাকে সামনে আনার পেছনে কাজ করেছেন লোক–গবেষক আহমদ সিরাজ, ভাষাবিজ্ঞানী সেলু বাসিত ও কুরুখ ভাষার গবেষক দীপংকর শীল। তাঁরা এই ভাষার বই, অভিধান তৈরি করেছেন। দীপংকর শীল বলেছেন, কুরুখ দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের একটি শাখা। ভারতে থাকলেও বাংলাদেশে কুরুখ ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা নেই। কুরুখ ভাষায় লোকসংগীত, গল্প, ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন ইত্যাদির চর্চা আছে। ভাষাটি এখন বিপন্ন।
বর্তমানে সপ্তাহে এক দিন করে বসছে শিক্ষাকেন্দ্রটি। কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয়ের আপন ওঁরাও ও মিঠুন ওঁরাও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শিশুদের কুরুখ ভাষা শিক্ষা দিচ্ছেন। সহভাষা বাংলা-ইংরেজিও শেখাচ্ছেন। দুজনে চান তাঁদের মাতৃভাষার চর্চা গতি পাক। শিক্ষাকেন্দ্রটিতে নিয়মিত ২০টি শিশু মাতৃভাষার শিক্ষা নিচ্ছে।
শিশুদের মাতৃভাষা শেখানোর এই উদ্যোগের জন্য ওঁরাও জনগোষ্ঠী ও কুরুখ ভাষা শিক্ষাকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানাতে হয়। কিন্তু শিক্ষাকেন্দ্র নাম হলেও ‘কুরুখ ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র’র কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেই। একটি বাড়ির উঠানে চাটাই পেতে শিক্ষা কার্যক্রম চলে।
যে উদ্যোগ সরকারি পর্যায়ে নেওয়ার কথা, সেই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে। তবে আশার কথা হলো, ওঁরাও শিশুদের মাতৃভাষা শেখার অন্যতম বড় যে চ্যালেঞ্জ, সেই কুরুখ ভাষার অভিধান তৈরির কাজটা হয়ে গেছে। এক বছর ধরে শিশুদের শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে। এখন কুরুখ ভাষার বর্ণমালা তৈরি ও সেই ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার যে উদ্যোগ চলমান রয়েছে, সেটি এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).