চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত রোববার থেকে শিক্ষক সমিতি যে কর্মসূচি নিয়েছে, সেটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা যাবে না। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার ও সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে যেমন সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তেমনি শিক্ষক সমিতির নেতারাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ভিত্তিতে। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোন বিভাগে কতজন শিক্ষক দরকার হবে, তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি। এরপর শূন্য পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর এসব তথ্য পাঠানো হয় নিয়োগ বোর্ডে। বোর্ডপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নিয়োগের সুপারিশ করে। পরে সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়।
কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বা বাংলা বিভাগ থেকে সে রকম সুপারিশ করা না হলেও উপাচার্য বিশেষ ক্ষমতাবলে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন, ইতিমধ্যে আইন বিভাগের প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আপত্তির মুখে বাংলা বিভাগের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর শিক্ষক সমিতি উল্লিখিত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলসহ ২৬ দফা দাবি সাত দিনের মধ্যে পূরণ করার জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না দিলে রোববার থেকে তারা এক দফা অর্থাৎ উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। রবি ও সোমবার তঁারা দুই ঘণ্টা করে কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য এই প্রতীকী অবস্থান। ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে পারেন।
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে হলে প্রশাসন ও শিক্ষকদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী অন্তত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা সিন্ডিকেটের সুপারিশ অনুযায়ী। কিন্তু সরকার কম ক্ষেত্রেই সেটা মান্য করে। ফলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতিকে মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা যায়।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক শিক্ষক। অথচ তিনি শিক্ষক সমিতির দাবিদাওয়া নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী নন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ-কাণ্ডের সঙ্গে যদি আমরা উদ্বোধন-কাণ্ডকে মিলিয়ে দেখি, সেখানে জনগণের করের অর্থের বেশুমার অপচয় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভবন উদ্বোধনেই ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচ করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খরচ এ দেখানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করেছেন, খুবই ভালো কথা। কিন্তু যেখানে অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ত আবাসিক ও পরিবহন-সংকটে থাকতে হয়, সেখানে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে ভবন উদ্বোধনের কী যুক্তি থাকতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি কোনো জবাবদিহি থাকবে না?
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির মধ্যে সমস্যা হতে পারে। সেটি আলোচনা করেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষক সমিতির নেতাদের নিজের দপ্তরে ডেকেও তাঁদের কথা শোনেননি। এটা ক্ষমতার অপব্যবহারই বটে।
শিক্ষক নিয়োগ ও ভবন উদ্বোধন—দুই ক্ষেত্রে কী কী অনিয়ম হয়েছে, তদন্ত করা হোক। দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).