মেট্রোরেল এ পকেটমারী বন্ধ করুন

তকাল সোমবার দুপুরে মতিঝিল থেকে মেট্রোরেলে উঠলাম। যাব কারওয়ান বাজারে। প্রতিদিন মেট্রোরেলের চলাচলের যে গতি দেখি, তার চেয়ে একটু কম মনে হলো। পরক্ষণেই ভাবলাম, এটা আমার ভুল। কিন্তু সচিবালয় স্টেশনে এসে ট্রেনটি যেভাবে থামল, তাতে মনে হলো যেন চালক ‘কড়া ব্রেক’ করেছেন। থামানোর ধরন দেখে নিশ্চিত হলাম যে এতক্ষণ যা ভেবে এসেছি, তা ঠিক। গতি ধীরই ছিল। গতি কেন ধীর ছিল, জানি না। কিন্তু ট্রেনটি থামানোর ধরন দেখে পাশে দাঁড়ানো মধ্যবয়স্ক যাত্রী বলেই ফেললেন, ‘নতুন চালক মনে হইতেছে।’ তাঁর কথা শুনে আরেকজন ফোড়ন কাটলেন, ‘পয়সা দিয়ে ঢুকছে মনে হয়!’ এ কথায় আশপাশের যাত্রীদের মধ্যে হাসির রোল উঠল।

কিন্তু এর পরপরই মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের এক ঘোষণায় পরিবেশ অন্য দিকে মোড় নিল। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলেন, ‘পকেটমার থেকে নিরাপদে থাকুন। আপনার মোবাইল, মানিব্যাগ হেফাজতে রাখুন।’

মেট্রোরেলে এ রকম ঘোষণা নিয়মিত যাত্রী হিসেবে আমি অন্তত এর আগে শুনিনি। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সবার হাত চলে গেল পকেটে। একজন আরেকজনের দিকে মুখ–চাওয়াচাওয়ি করে মুঠোফোন-মানিব্যাগ ঠিক আছে কি না, দেখে নিলেন।

এক ভদ্রলোক বললেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা ঘটেছে। তা না হলে তো এমন ঘোষণা দিত না।’ তাঁর কথা শুনে এক তরুণ বলল, সম্প্রতি নাকি মেট্রোরেলে একাধিক মুঠোফোন হারানোর ঘটনা ঘটেছে, যা পকেটমারদের কাজ। এ কারণেই এই ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। পাশে দাঁড়ানো আরেক ভদ্রলোক হতাশ কণ্ঠে বললেন, ‘এত দিন একটু নিশ্চিন্তে এই মেট্রোরেলে যাওয়া-আসা করতাম, এখন বুঝি সে দিন গেল। সারাক্ষণ তটস্থ থাকতে হবে।’

এ কথা শুনে এক প্রবীণ বললেন, সারা দুনিয়ায় কোথাও মেট্রোরেলে এমন ঘোষণা দেওয়া হয় না। এ কেবল আমাদের দেশেই সম্ভব। এবার মুখ খুললেন আরেক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। রসিকতা করে বললেন, ‘ভাগ্যিস, ঘোষণাটা বাংলায় দিয়েছে। ইংরেজিতে দিলে বিদেশিরা শুনে ফেলত!

পরবর্তী আলাপ আর শোনার সুযোগ আমার হলো না। কারণ, ট্রেন ততক্ষণে কারওয়ান বাজার স্টেশনে পৌঁছে গেছে। আমার নামতে হলো।কয়েক দিন আগে দেখলাম, নারীদের পৃথক কামরাটি থেকে হন্তদন্ত হয়ে বের হলেন দুই তরুণ! দেখে শিক্ষিতই মনে হলো। মেট্রোরেলে কোনটি নারী কামরা, তা স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সাধারণভাবে কারোরই ভুল করার কথা নয়। তবু তাঁরা ভুল করলেন।

তবে ভুল হতেই পারে। ভিড়বাট্টা বেশি, তাড়াতাড়ি ওঠার চাপ, এ জন্য হয়তো ভুল হয়েছে। তবে তাঁরা ওই কামরা থেকে  বেরিয়ে এসেছেন।

মেট্রোরেলের সব স্টেশনের হিসাব বলতে পারব না। তবে সচিবালয় স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠেন বেশি। নামেন খুব কম। মতিঝিল থেকে একটু ফাঁকা হয়ে এলেও এখানে এসে একদম ভরে যায়।

ইদানীং লক্ষ করছি, নারীরা সাধারণ কামরায় উঠলেই একশ্রেণির মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। নারীদের জন্য তো আলাদা কামরা আছে, তারা কেন এই কামরায় উঠছেন? এমন প্রশ্ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে যখন ভিড় বেশি থাকে, তখন এসব প্রশ্ন সমানে চারপাশ থেকে আসতে থাকে।

নারী একাকী হলে সাধারণত নারী কামরায় ওঠেন। আর সঙ্গে পুরুষ থাকলে ওঠেন সাধারণ কামরায়। এ রকমই দেখছি।

তবে অনেকেরই সচেতনতার ঘাটতি আছে। আলাদা যে নারী কামরা আছে, এটা নারী যাত্রীদের বেশির ভাগই জানেন। কিন্তু ট্রেন ছাড়ার সময় অনেকেই তাড়াহুড়া করে ওঠেন। এ জন্য সামনে যে বগি বা কামরা পড়ে, এতেই উঠে পড়েন। কিন্তু নারী যাত্রীদের অনেকেই হয়তো জানেন না যে সাধারণ বগিতে উঠে পড়লেও ভেতর থেকেই নারী কামরায় যাওয়া যায়। তবে ভিড় বেশি থাকলে তো এগোনো মুশকিল হয়।

অফিস টাইমে নারী কামরায়ও খুব বেশি ভিড় লক্ষ করা যায়। দাঁড়িয়েই যাতায়াত করেন বেশির ভাগ নারী যাত্রী। অন্য সময় কিছুটা ফাঁকা থাকে।

একটা বিষয় ভালো লাগছে, মেট্রোরেলে তরুণ যাত্রীদের অনেকেই মুরব্বিদের জন্য আসন ছেড়ে দিচ্ছেন। ‘আঙ্কেল, আপনি বসুন, আন্টি আপনি বসুন, আমি পরের স্টেশনে নেমে যাব’, এ রকম কথা ঢের শোনা যাচ্ছে। ‘না বাবা, তুমি বসো, আমার দাঁড়াতে সমস্যা হচ্ছে না’, এ রকম ফিরতি উত্তরও আসছে। সমাজে বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পুরোনো চর্চা যে এখনো টিকে আছে, দেখে ভালো লাগছে। সাধারণত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের চর্চা বেশি হয়ে থাকে। এই শ্রেণিই এই চর্চাকে এগিয়ে নেন। মেট্রোরেলেও তা–ই দেখছি।

মেট্রোরেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই এর যেন কোনো ক্ষতি না হয়, এমনভাবে আমাদের ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ান, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে ইতিবাচক দিক হলো, সাধারণ যাত্রীদের মধ্যেই একধরনের সচেতনতা গড়ে উঠছে। তাঁরাই অন্য যাত্রীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, যা খুব ভালো দিক।

যখন ভিড় বেশি হবে, তখন সবাই মিলে মুখের কাছে অর্থাৎ দরজার কাছে ভিড় করা সমীচীন নয়। সবাইকে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। শৃঙ্খলা মানতে হবে। মেট্রোরেলে ভিড় হবেই। এটা সারা দুনিয়ার রেওয়াজ।

আরেকটা কথা। শুক্রবার মেট্রোরেল বন্ধ থাকে। এ নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। এক দিন বন্ধ থাকতেই পারে। কিন্তু ছুটির দিনটিতে অনেকেই এখানে-ওখানে যেতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে দিনের একবেলা এই বাহন চলতে পারে কি না, ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।

শেষ কথা হলো, মেট্রোরেলকে অবশ্যই যাত্রীদের জন্য নিরাপদ রাখতে হবে। পকেটমার কেউ ধরা পড়লে তাঁকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সাজা দিতে হবে। সব মিলে যাত্রীদের সচেতনতাই পারে এই গণপরিবহনকে নিরাপদ রাখতে।

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

View All resone For signin

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

Recent News

This petiton does not yet have any updates

Jannat Jara

Started This Abedon.

15 May 2024   4.4 K

0 have signed. Let’s get to 100,000 !

0%
Treands

At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!

Sign This

By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.

Must see setitions

রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুন,আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুন,আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে... Sign This
বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদী দখল,পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদী দখল,পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

‘উন্নয়ন প্রকল্প’ যে অনেক সময় সুপরিকল্পিত দখলদারির অংশ হতে পারে, তার আরেক উদাহরণ দেখা গেল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায়। সেখানে চিত্রা... Sign This
বাউলদের ওপর হামলা,সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে চাই

বাউলদের ওপর হামলা,সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে...

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী ও ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলা ও হুমকি ধারাবাহিক মব সহিংসতা এবং তা ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। গত... Sign This
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ,চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ,চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

দেশে সব সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়ে থাকে ব্যবসায়ী মহলে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য... Sign This
প্রকাশ্যে খুন ও বাসে আগুন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি নজর দিন

প্রকাশ্যে খুন ও বাসে আগুন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি নজর...

চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা এবং বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ... Sign This
ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ

ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ

শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ) সড়ক নির্মাণকাজ চলছে, যার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। তবে প্রকল্পের জমি... Sign This
নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনগণকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র নিয়ে কয়েকটি কৌতুক

নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনগণকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র...

১.একটি প্রচলিত কৌতুক দিয়ে শুরু করি।আকাশে উড়ন্ত বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিমানে যাত্রী মোট চারজন। একজন পাইলট, একজন রাজনৈতিক... Sign This
কোল পরিবারকে উচ্ছেদ,ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

কোল পরিবারকে উচ্ছেদ,ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা খুবই অমানবিক। যে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক... Sign This
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য,নির্বিচার শামুক লুট এখনই থামান

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য,নির্বিচার শামুক লুট এখনই থামান

সুন্দরবন–সংলগ্ন নদী ও খাল থেকে নির্বিচার শামুক-ঝিনুক আহরণ নতুন হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এটি শুধু নদীর জীববৈচিত্র্যকেই বিপন্ন করছে না।... Sign This
নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস,গোটা চক্রকে কোনো ছাড় নয়

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস,গোটা চক্রকে কোনো ছাড় নয়

চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। একে তো কর্মসংস্থানের সংকট, বাড়ছে বেকারত্ব, তরুণেরা আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে... Sign This
Loading