দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সিলেটে বর্ষা ও বন্যার প্রকোপ বেশি হলেও কর্তৃপক্ষ আদৌ সজাগ বলে মনে হয় না। সম্প্রতি শহরে টিলাধসে এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। খবর থেকে জানা যায়, প্রভাবশালীদের মদদে বৃষ্টির সময় টিলায় টিলায় সরু নালা কেটে রাখা হয়। উদ্দেশ্য হলো টানা বৃষ্টিতে নরম হয়ে আসা মাটি নালা বেয়ে যাতে টিলার পাদদেশে নেমে আসে। ১০ জুন ভোরে নগরীর মেজরটিলা চামেলীবাগ এলাকায় সে রকম একটি টিলার মাটি ধসে এক পরিবারের তিনজন নিহত হন।
প্রতিবেদক নগরের বড়গুল, কারিপাড়া, হাওলাদারপাড়া, ব্রাহ্মণশাসন, দুসকি, ডলিয়া ও মেজরটিলা এলাকার ১১টি টিলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান, পাঁচটি টিলায় নালা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। অন্যগুলোতে নালা কাটা না থাকলেও ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত টিলা কেটে রাখা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের মদদে চামেলীবাগের টিলাটি কাটা হচ্ছিল। কাউন্সিলরের পৃষ্ঠপোষকতায় শতাধিক পরিবার ওই টিলার ওপরে ও নিচে ঘর বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।
সিলেটে টিলা ধসে মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, সিলেট নগর ও জেলায় গত এক দশকে টিলাধসে ৪০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে জৈন্তাপুরেই এক পরিবারের চারজন মারা যান। পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন, নগরের ব্রাহ্মণশাসন, দুসকি, হাওলাদারপাড়া, মেজরটিলা, খাদিমনগর, মালনীছড়া, বালুচর, চন্দসটিলাসহ অন্তত ৩০টি স্থানে টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ১০ হাজার পরিবার বসবাস করছে। এর বাইরে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়ও টিলার ঢালু ও পাদদেশে অসংখ্য বসতি আছে।
একদা সিলেট শহরের প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিল পাহাড় ও টিলার সবুজ আচ্ছাদন। কিন্তু এখন আর সিলেটের সেই সৌন্দর্য নেই, সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে। আর এসব পাহাড় ও টিলা রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, তঁারা অনেকটা নির্বিকার। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তৎপরতা দেখা যায়। তারপর আবার সবাই নিশ্চুপ।
পাহাড় ও টিলাধসের সঙ্গে জলাবদ্ধতার নিগূঢ় সম্পর্ক আছে। বৃষ্টির পানি সঙ্গে সঙ্গে সরে গেলে টিলা ও পাহাড়ের ক্ষতি হয় না। কিন্তু দিনের পর দিন শহরে পানি জমতে থাকলে টিলার মাটি ধসে পড়বেই। সুরমা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেই সিলেট শহরের জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এ ব্যাপারে হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসকও নগরবাসীকে সজাগ থাকতে বলেছেন। কিন্তু যেখানে স্থানীয় কাউন্সিলরই পাহাড় ও টিলা কাটার সঙ্গে জড়িত থাকেন, সেখানে শূন্য সহিষ্ণুতার আওয়াজ কোনো কাজে দেবে না। সিলেট সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা অনেকটা রোগী মারা যাওয়ার পর চিকিৎসক আসার মতো। টিলা ধসে তিনজন মানুষ মারা যাওয়ার পর তাঁরা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন। কাজটি আগে করলে হয়তো তিনটি প্রাণ বেঁচে যেত।
সামনে বৃষ্টি ও বন্যার মৌসুম। এ সময়ে ঝুঁকি আরও বাড়বে। অতএব অবিলম্বে টিলার পাদদেশে বসবাসরত মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হোক। একই সঙ্গে কথিত উন্নয়নের নামে কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করতে যাঁরা টিলা কাটছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা সময়ের দাবি বলে মনে করি।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).