বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক সম্পদই নয়, এটি লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন। ঘূর্ণিঝড় থেকে উপকূলকে রক্ষা করা থেকে শুরু করে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই বনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু আজ এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ প্লাস্টিকের আগ্রাসনের শিকার। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের দূষণ সুন্দরবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিবেদন জানাচ্ছে, খুলনার কয়রা উপজেলার জেলেদের জালে এখন মাছের বদলে চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল আর পলিথিন উঠে আসছে। প্লাস্টিকের মহামারি সুন্দরবনের খাদ্যশৃঙ্খলকে সরাসরি আঘাত করছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, মাছের পেটে মিলছে পলিথিনের টুকরা। মাছের মাধ্যমে সেই মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, সুন্দরবনের পানিতে গড়ে প্রতি লিটারে ২ দশমিক ২২টি এবং মাটিতে প্রতি কেজি গড়ে ৭৩৪টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া যাচ্ছে। সুন্দরবনের এই ভয়াবহ চিত্র উদ্বেগজনক।
প্লাস্টিক দূষণের উৎস কেবল পর্যটকদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য নয়, বরং সুন্দরবন-সংলগ্ন প্রায় ৮০টি গ্রাম ও তাদের হাটবাজার। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ছোটখাটো সামাজিক অনুষ্ঠান—সবখানেই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের প্লেট, কাপ ও বোতল অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অনুষ্ঠান শেষে সেই বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদী ও খালে, আর জোয়ার-ভাটার স্রোতে ৫২টি নদী-খাল পেরিয়ে সেই প্লাস্টিক পৌঁছে যাচ্ছে সুন্দরবনের গভীরে।
সুন্দরবনের এই প্লাস্টিক আগ্রাসন বন্ধ করতে হলে বন বিভাগকে তৎপর হতে হবে। নৌপথগুলোতে জলযান থেকে প্লাস্টিক ফেলার বিরুদ্ধে কঠোর জরিমানা এবং ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আদেশ কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই লোকালয় থেকে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। নদী-খালের তীরে বর্জ্য জমা হওয়ার আগেই তা অপসারণের ব্যবস্থা করা দরকার, যাতে জোয়ারের পানিতে তা ভেসে গহিন বনে পৌঁছাতে না পারে।
কেবল বন বিভাগের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সস্তা ও সুবিধাজনক বলে যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক তাঁরা ব্যবহার করছেন, তা যে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের জীবিকা ও জীবনকে ধ্বংস করছে—এই বার্তা তাঁদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, মসজিদ–মন্দিরের ইমাম–পুরোহিতসহ স্থানীয় নাগরিক সমাজের সব প্রতিনিধির ভূমিকাকে কাজে লাগাতে হবে।
সুন্দরবনে প্লাস্টিকের এই নীরব আগ্রাসন থামাতে না পারলে আমাদের বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে। লাখো মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে তো পড়বেই, প্রাকৃতিকভাবেও আমরা যে কল্পনাতীত ক্ষতির সম্মুখীন হব, যা কখনো নিরসন করা সম্ভব নয়।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).