অসতর্কতাবশত এক শিক্ষার্থীর ফেলা থুতু অন্য এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগাকে কেন্দ্র করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে সামাজিক অসহিষ্ণুতা ও আইনশৃঙ্খলার ভঙ্গুর পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া সংঘাত প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের নৈরাজ্যিক কর্মকাণ্ডে একদিকে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল সম্পদের ক্ষতিসাধন হচ্ছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনও ব্যাহত হচ্ছে, আবার সংঘাতে জড়িয়ে আহতও হচ্ছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, নাগরিক—সবার জন্যই চরম উদ্বেগের।
ও পত্রিকান্তরের খবরে জানা যাচ্ছে, রোববার রাতে ঢাকার আশুলিয়ায় বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫০ শিক্ষার্থী আহত হন। সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর একটি মেসে হামলা চালান। অন্যদিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা চালিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে লন্ডভন্ড করে দেন। ১৩টি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার কক্ষ ভাঙচুর করা হয়, নথিপত্রও নিয়ে যাওয়া হয়। সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় তাদের ২০-২৫ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে।
এত বড় একটা নৈরাজ্যের সূত্রপাত অসতর্কতাবশত ফেলা থুতু গায়ে লাগার মতো অতি তুচ্ছ এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সাধারণ দুঃখ প্রকাশেই এর অবসান হতে পারত। অথচ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতটুকু বিনয় ও সহিষ্ণুতার পরিচয় তো দিলেনই না, বরং বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন। এরপর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালালেন। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুলিশের উপস্থিতিতে মীমাংসা হওয়ার পরও সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে চরম ক্ষতিসাধন করা হলো।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড় শ ছাড়িয়েছে। জনসংখ্যার বিচারে উচ্চশিক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর অনুপাত এখন প্রায় ২০ শতাংশ। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অবকাঠামোগত বিনিয়োগের ফলে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার মান ও উদ্দেশ্য নিয়ে বরাবরই বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষা যেখানে একজন শিক্ষার্থীকে পরমতসহিষ্ণু, উদার, মানবিক করে তোলার কথা, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার বিপরীত যাত্রাটাই আমরা লক্ষ করছি। ফলে আমাদের শিক্ষাদর্শনে যে বড় গলদ রয়ে গেছে, এই আত্মোপলব্ধিটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছোটখাটো বিতণ্ডা তারুণ্যের স্বাভাবিক ধর্মের কারণেই ঘটতে পারে। কিন্তু যেভাবে শত শত শিক্ষার্থী দল বেঁধে একে অন্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে যাচ্ছে, সেটা মোটেই স্বাভাবিক বিষয় নয়। ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত সংঘাতের কারণে প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার চার কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় আকারের সংঘাত হয়েছিল এবং হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের বিপুল ক্ষতিসাধন হয়েছিল। ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে একই পুনরাবৃত্তি দেখা গেল।
দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘাতে লিপ্ত থাকলেও সেটা থামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। পুলিশের এটা একটা বড় ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল টিম ও ছাত্র উপদেষ্টাদের ভূমিকাও যথেষ্ট ছিল বলে আমরা মনে করি না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা, উদারতার মতো মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিদারুণ ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এমন নৈরাজ্যের অবসান হতে হবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).