দুই জেলখানার চিত্র,কারাগার যেন অপরাধের কেন্দ্র না হয়

দেশের সবচেয়ে ‘হাই সিকিউরিটি’ নামধারী দুই কারাগার হলো কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার। এই দুই কারাগার এমন সব অপরাধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যা একই সঙ্গে উদ্বেগজনক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বড় হুমকি।

এই দুই কারাগারে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের রাখা হয়। তাই তাঁদের নিরাপত্তা ও নজরদারিই সবচেয়ে কঠোর হওয়ার কথা। অথচ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদন এবং অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, কারাগারগুলো এখন বাইরের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণের একটি কেন্দ্র।

এসবির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ৩৬০টি অবৈধ মুঠোফোন নম্বর এই দুই কারাগার থেকে নিয়মিত ব্যবহৃত হচ্ছে। কারাগারের ভেতর থেকে ফোনে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা, এমনকি রাজনৈতিক নির্দেশনা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। কিছু বন্দী কারাগার ভেঙে পালানোর পরিকল্পনাও করছিলেন, যার প্রমাণ পাওয়া গেছে কম্বল ছিঁড়ে দড়ি বানানো এবং শৌচাগারের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার ঘটনায়।

‘হাই সিকিউরিটি’ ব্যবস্থার ভেতরেই যখন বন্দীরা এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ পান, তখন কারা ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো চক্রটি চালান কিছু অসাধু কারারক্ষী, সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্দী এবং দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ নেটওয়ার্ক। অর্থের বিনিময়ে ফোন, সিম ও মাদক কারাগারে ঢোকে। বন্দীরা পায়ুপথে ছোট আকারের ফোন ঢোকাচ্ছেন; বাইরে থেকে প্যাকেট বানিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে; শৌচাগারের কমোডের ফাটলে লুকানো হচ্ছে ফোন। এসবই হচ্ছে কারাগারের ভেতরে থেকে সহযোগিতা থাকার ফলে।

কারাগারের ভেতরে সিগারেটকে ‘বিকল্প মুদ্রা’ হিসেবে ব্যবহার করার যে তথ্য বেরিয়েছে, তা কারা প্রশাসনের দুর্নীতির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারাবন্দীরা পিসি কার্ডের টাকা দিয়ে কিংবা সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে ফোন ব্যবহারের অনুমতি কিনছেন। চিত্রটি আরও ভয়াবহ হয়, যখন দেখা যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিরা পর্যন্ত ফোনে বাইরে যোগাযোগ রাখছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নির্দেশ দিচ্ছেন, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন, এমনকি হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মগবাজার বা গুলশানের মতো এলাকায় সংঘটিত অপরাধের জন্য কারাগারকেন্দ্রিক এই নেটওয়ার্কের জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে।

কারা মহাপরিদর্শক স্বীকার করেছেন, মুঠোফোন ব্যবহার ‘শূন্য’ অবস্থায় নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, জনবল ঘাটতি, প্রশিক্ষণের অভাব এবং অতীতে অনিয়মে নিয়োগ পাওয়া অনুপযুক্ত কর্মচারীদের কারণে সমস্যা সমাধান কঠিন হচ্ছে। তাঁর এই স্বীকারোক্তির পর প্রশ্ন ওঠে, কারাগারকে ‘অপরাধের নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ হতে দেওয়াই কি স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে গেছে?

এসবি কিছু যৌক্তিক সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কার্যকর জ্যামার ও উন্নত স্ক্যানার স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি এবং সরবরাহকারীদের শনাক্তকরণ। কিন্তু এসবই বহু বছরের পুরোনো কথা। প্রশ্ন হলো এখনো কেন এসব বাস্তবায়িত হয়নি? ক্ষমতা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের জটিল জাল কি কারা প্রশাসনকে স্থবির করে দিয়েছে? কারাগার এমন একটি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা, যেখানে অপরাধের সংশোধন হবে। কিন্তু সেখান থেকে যদি অপরাধের নির্দেশনা যায় কিংবা পরিকল্পনা হয়, তাহলে তা খুবই উদ্বেগজনক।

দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন, কারা প্রশাসনের কার্যকর সংস্কার এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, পেশাদার ও জবাবদিহিসম্পন্ন কাঠামো গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কারাগার যেন কোনোভাবেই অপরাধের কেন্দ্র না হয়ে ওঠে, সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

View All resone For signin

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

Recent News

This petiton does not yet have any updates

Tarik

Started This Abedon.

11 December 2025   2.8 K

0 have signed. Let’s get to 15,000 !

0%
Treands

At 15,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!

Sign This

By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.

Must see setitions

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই

সম্মানিত পাঠক, একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো একজন ২৭ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যুবককে দুই হাত বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে কিছু... Sign This
জামালপুর শহরে নদ ভরাট,দখলদারি বন্ধে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

জামালপুর শহরে নদ ভরাট,দখলদারি বন্ধে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা...

জামালপুর শহরের চালাপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের একটি শাখা নদ ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের ঘটনা দেশের নদ–নদী, পরিবেশ এবং প্রশাসনিক জবাবদিহি—তিন দিক... Sign This
রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর হামলা,হামলাকারী ও সিন্ডিকেটের কাউকে ছাড় নয়

রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর হামলা,হামলাকারী ও সিন্ডিকেটের কাউকে ছাড়...

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর দিনের আলোয় হামলার ঘটনা বন্দরকে ঘিরে চোরাচালান চক্রের তৎপরতা ও তাদের বেপরোয়া হয়ে... Sign This
চাঁদাবাজি ও স্বজনতোষণ  ,ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব

চাঁদাবাজি ও স্বজনতোষণ ,ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব

রাজধানীতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে বিনিয়োগ সংলাপ’ অনুষ্ঠান থেকে উঠে আসা বক্তব্যগুলো দেশের অর্থনীতি ও... Sign This
রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুন,আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুন,আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে... Sign This
বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদী দখল,পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদী দখল,পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

‘উন্নয়ন প্রকল্প’ যে অনেক সময় সুপরিকল্পিত দখলদারির অংশ হতে পারে, তার আরেক উদাহরণ দেখা গেল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায়। সেখানে চিত্রা... Sign This
বাউলদের ওপর হামলা,সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে চাই

বাউলদের ওপর হামলা,সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে...

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী ও ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলা ও হুমকি ধারাবাহিক মব সহিংসতা এবং তা ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। গত... Sign This
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ,চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ,চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

দেশে সব সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়ে থাকে ব্যবসায়ী মহলে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য... Sign This
প্রকাশ্যে খুন ও বাসে আগুন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি নজর দিন

প্রকাশ্যে খুন ও বাসে আগুন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি নজর...

চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা এবং বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ... Sign This
ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ

ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ

শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ) সড়ক নির্মাণকাজ চলছে, যার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। তবে প্রকল্পের জমি... Sign This
Loading