চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা এবং বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ঘিরে খুনোখুনি, অন্যদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত কর্মসূচি কেন্দ্র করে এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের কথা বললেও তাতে কতটা আস্থা রাখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গত ১৪ মাসে সরকার বারবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ মতো কিছু জনতুষ্টিবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তা কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে-পরে ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা-ব্যবস্থার সুযোগে অনেক অপরাধী জেল থেকে পালিয়ে যান, এর মধ্যে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ছিলেন। ভঙ্গুর প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুযোগে জামিনেও অনেকে বের হয়ে যান। তাঁদের অনেককেই আর গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ সময় থানা ও কারাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদও খোয়া যায়, যার অনেকটাই উদ্ধার করা যায়নি।
এ ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও খোয়া যাওয়া অস্ত্রের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে পারে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা নানা সময়ে সরকারকে সতর্ক করেছেন। তা সত্ত্বেও অস্ত্র উদ্ধার ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো অভিযান দেখা যায়নি। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেল থেকে বের হওয়ার পর অপরাধজগতে আবারও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন, তা নিয়েও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রায়ই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ভয়াবহ অপরাধে যে জড়িত হয়ে পড়েছেন, তারও সুনির্দিষ্ট তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি শীর্ষ সন্ত্রাসী ও খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে।
৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেওয়া সারোয়ার হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একসময় তালিকাভুক্ত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সাজ্জাত আলীর অনুসারী সারোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা ছিল। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সোমবার পুরান ঢাকায় মোটরসাইকেলে করে আসা অস্ত্রধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি করে পুলিশের তালিকায় থাকা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাইফকে হত্যা করে। পুলিশের ধারণা, আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের অনুসারীরা ঢাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
দুটি হত্যাকাণ্ডের ভিডিওই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একের পর এ ধরনের হত্যাকাণ্ড জনমনে যেমন আতঙ্ক তৈরি করে, একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের অনলাইনে ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিলেও সোমবার কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাস ও প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হলে এক ব্যক্তি পুড়ে মারা যান।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং ককটেল হামলা ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার মতো নাশকতামূলক ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের। বর্তমান বাস্তবতায় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাশকতা বন্ধে সরকারের বাড়তি মনোযোগ জরুরি। এটা শুধু মুখে বলার বিষয় নয়, নাগরিকেরা এ ব্যাপারে কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 15,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).