‘উন্নয়ন প্রকল্প’ যে অনেক সময় সুপরিকল্পিত দখলদারির অংশ হতে পারে, তার আরেক উদাহরণ দেখা গেল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায়। সেখানে চিত্রা নদীতে দখলের নেতৃত্ব দিচ্ছে কোনো ভূমিদস্যু বা অপরাধ চক্র নয়; এর নেতৃত্ব দিচ্ছে পৌরসভা। অর্থাৎ রাষ্ট্রের টাকায়, রাষ্ট্রের নামেই, রাষ্ট্রের আইন ভেঙে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখলের এক খারাপ নজির স্থাপন করা হচ্ছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০ স্পষ্ট ভাষায় বলছে, যে স্থান শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে এবং বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়, তা নদীতট বা ফোরশোর। এই ভূমির ওপর কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা দপ্তরেরই কোনো অধিকার নেই। এখানে কোনো ভবন তোলা তো দূরের কথা, সীমানার খুঁটি বসানোরও আইনগত সুযোগ নেই। অথচ এ নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে চিত্রা নদীর বুকেই একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে—পৌরসভা ভবন, শৌচাগার, দলীয় কার্যালয়, দোকান, স্মৃতিস্তম্ভ। আর এবার সেই দখলকে পাকাপোক্ত করতে নদীর ভেতর কংক্রিটের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছে বাঘারপাড়া পৌরসভা।
যে পৌরসভার জনগণের সেবা দেওয়ার কথা, সেই পৌরসভাই যদি নদী দখল করে, তাহলে যে বার্তা যায়, তা হলো আইন দুর্বল মানুষের জন্য; শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান চাইলেই তা অমান্য করতে পারে। এ বার্তা পরিবেশ ধ্বংসের চেয়েও ভয়াবহ। ২০২০ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে স্পষ্টভাবে চিত্রা নদী দখলের চিত্র উঠে আসে। সেখানে দখলদার হিসেবে পৌরসভার নামও রয়েছে। এরপরও যদি নদীর ভেতর সীমানাপ্রাচীর দাঁড় করানো হয়, তবে সেটি কেবল আইন ভঙ্গ নয়, এটি আদালত ও কমিশনের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ।
আরেক দিকে সরকারেরই পানি উন্নয়ন বোর্ড জানাচ্ছে, ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে চিত্রা নদী পুনঃখনন করা হবে। অর্থাৎ এক হাতে নদী উদ্ধারের প্রকল্প, আর অন্য হাতে নদী দখলের অবকাঠামো। এ যেন রাষ্ট্রের দুই হাতেই একে অপরের গলা টিপে ধরা! এই দ্বিচারিতা কেবল হাস্যকর নয়, এটি সুশাসনের কফিনে পেরেক ঠোকার শামিল।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘আমি নতুন এসেছি, জানতাম না।’ এটি কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হতে পারে না।
চিত্রা নদীর ভেতরে চলমান সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে যে অংশ নির্মিত হয়েছে, তা দ্রুত ভেঙে ফেলতে হবে। পৌরসভার জড়িত কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দখলের সঙ্গে যুক্ত সব স্থাপনার তালিকা প্রকাশ ও উচ্ছেদ পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। আমরা আশা করি, নদী রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় প্রশাসন আশু পদক্ষেপ নেবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 15,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).