রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ব্যস্ত করিডরে সম্প্রতি এমন একটি দৃশ্য দেখেছি, যা কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাকে তাড়িত করে চলেছে। সাতক্ষীরার এক নারী বিভ্রান্ত ও একা বসে ছিলেন। হাতে কয়েকটি প্রেসক্রিপশনের কাগজ, যা তিনি পড়তে পারেন না। তাঁর চোখেমুখে গভীর উদ্বেগের ছাপ। দেড় মাস বয়সী সন্তানের চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকায় ছুটে এসেছেন।
এলাকার পরিচিত এক ব্যক্তি কিছু অর্থসহায়তা হাতে ধরিয়ে ওই নারীকে বাসে তুলে দিয়েছেন। কোলের সন্তানের জীবন বাঁচাতে একাই ছুটে এসেছেন ঢাকায়। বাড়িতে রেখে এসেছেন আরেক সন্তান ও স্বামীকে। স্বামী আবার কথা বলতে পারেন না, বাক্প্রতিবন্ধী।
এখন হাসপাতালে ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎসাসেবা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসা পরিকল্পনা, ওষুধপত্র কেনা বা ছাড়পত্রের ব্যবস্থা বুঝিয়ে বলার জন্য তাঁর কাছে কেউ ছিল না। এই নারীর সংগ্রাম বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে লাখ লাখ অনুরূপ গল্পের প্রতিনিধিত্ব করে।
এ দেশের সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা হাজারো মানুষের জীবন রক্ষা করে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের সম্মানের সঙ্গে চিকিৎসা ও সেবা দিতে পারে না। এখানে রোগীর শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক প্রয়োজনগুলো উপেক্ষিত থাকে।
অত্যধিক রোগীর ভিড়ে চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর অভাবনীয় চাপ থাকে। যার কারণে তাঁরা রোগীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার সুযোগ পান না। এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে একটি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত বিভাগ থাকলে এই মানবিক শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব।
এ সমস্যার সমাধানটি আরও হাসপাতাল নির্মাণ বা আরও যন্ত্রপাতি কেনায় নেই; বরং আমাদের সরকারি হাসপাতালে বিদ্যমান একটি উপেক্ষিত বিভাগকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই সম্ভব। আর বিভাগটি হলো সমাজসেবা বিভাগ। সে ক্ষেত্রে আমরা উন্নত বিশ্ব ও আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মডেল থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।
সরকারি হাসপাতালগুলো দেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষকে চিকিৎসা দেয়। রোগমুক্তির প্রশ্নে দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হাসপাতালের নেটওয়ার্ক গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য ভরসার জায়গা। তবু দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার বেশির ভাগ খরচ নিজেদের পকেট থেকেই দেন।
উন্নত দেশগুলোতে, যেমন যুক্তরাজ্য ও কানাডায় হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগ চিকিৎসা দলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে সমাজকর্মীদের প্রধান কাজ হলো ‘ডিসচার্জ প্ল্যানিং’ করা। তাঁরা নিশ্চিত করেন যে রোগী হাসপাতাল ছাড়ার পর বাড়িতে বা কমিউনিটিতে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও সমর্থন পাবেন। এ ছাড়া তাঁরা রোগীর মনঃসামাজিক অবস্থা মূল্যায়ন করেন। রোগীর অধিকার রক্ষায় অ্যাডভোকেসি করেন।
অনেক পরিবার গুরুতর অসুখের সময় আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়ে। আর্থিক বোঝার বাইরে রোগী ও তাঁদের পরিবার প্রায়ই চিকিৎসা ও সেবাপদ্ধতি, কাগজপত্র ও নিয়মকানুনের একটি বিভ্রান্তিকর গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। হাসপাতালে সেবা নিতে এসে দুঃসময়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা বা মানসিক সাহায্য পায় না।
বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সমাজসেবা বিভাগ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন কাজ করে। মোটাদাগে এই বিভাগের কাজগুলো হলো দরিদ্র ও অসহায় রোগী চিহ্নিতকরণ; রোগীর চাহিদা নিরূপণ; রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা প্রদান; চিকিৎসককে রোগী সম্পর্কে তথ্য প্রদান; রোগীর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, কেসওয়ার্ক তৈরি ও সংরক্ষণ; রোগীদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা; রোগী কল্যাণ সমিতি পরিচালনা এবং রোগী কল্যাণ সমিতি পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ।
অথচ এ বিভাগ সাধারণত চালানো হয় এক বা দুজন কর্মী দিয়ে। এসব কর্মীর থাকে না প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, থাকে না সুস্পষ্ট দায়িত্ব ও কর্মপরিধি। মূলত প্রশাসনিক কাজ, যেমন রোগী নিবন্ধন ও মৌলিক কল্যাণ সেবাগুলোই তাঁরা দেখভাল করেন। বিভাগটি মূলত দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার খরচ, ওষুধপত্র ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচের জন্য অনুদান সংগ্রহ ও বিতরণ করে।কিন্তু একজন রোগীর চিকিৎসা কেবল আর্থিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর মানসিক চাপ, চিকিৎসা–পরবর্তী পুনর্বাসন এবং সামাজিক সমর্থনও জরুরি। বর্তমান কাঠামোতে জনবল, প্রশিক্ষণ ও সমন্বয়হীনতার কারণে বিভাগটি এসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আসলে রোগী ও তাঁদের পরিবারের জটিল মানসিক, সামাজিক, আর্থিক ও তথ্যগত চাহিদা পূরণের সক্ষমতাও তাদের নেই।
অথচ একটি শক্তিশালী সমাজসেবা বিভাগ রোগীর চিকিৎসসেবাকে একটি মানবিক প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করতে পারে। এটি রোগীর রোগকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে তাঁর সামগ্রিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিতে সহায়তা করতে পারে। সমাজকর্মীরা রোগী ও তাঁর পরিবারের মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভয় কমাতে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করতে পারেন। এ ছাড়া তাঁরা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা, যেমন হুইলচেয়ার, কৃত্রিম অঙ্গ বা অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে পারেন। উন্নত যোগাযোগ নিশ্চিত করে তাঁরা চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারেন, যা চিকিৎসার প্রতি রোগীর আস্থা বাড়াবে।
কেবল নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন করতে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবার মানবিক দিক ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
উন্নত দেশগুলোতে, যেমন যুক্তরাজ্য ও কানাডায় হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগ চিকিৎসা দলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে সমাজকর্মীদের প্রধান কাজ হলো ‘ডিসচার্জ প্ল্যানিং’ করা। তাঁরা নিশ্চিত করেন যে রোগী হাসপাতাল ছাড়ার পর বাড়িতে বা কমিউনিটিতে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও সমর্থন পাবেন। এ ছাড়া তাঁরা রোগীর মনঃসামাজিক অবস্থা মূল্যায়ন করেন। রোগীর অধিকার রক্ষায় অ্যাডভোকেসি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই সমাজসেবা বিভাগ। স্বাস্থ্যসেবার মনঃসামাজিক দিকগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা সমাজকর্মীরা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত থেকে ছাড়পত্র পরিকল্পনা, পরিচর্যা সমন্বয় ও পারিবারিক পরামর্শে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেন।
কানাডিয়ান হাসপাতালগুলো এই একীভূত পদ্ধতির ভালো উদাহরণ। এ দেশের হাসপাতালগুলোতে সমাজকর্মীরা ব্যাপক মনঃসামাজিক মূল্যায়নের কাজটি করেন। রোগীর পরিবারকে জটিল পরিচর্যার সিদ্ধান্তে সহায়তা করেন। চিকিৎসা দল ও রোগীদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগে সহায়তা করেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি বা দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যায় মসৃণ পরিবর্তন নিশ্চিত করেন। তাঁরা রোগীর অধিকার রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করেন।আমাদের অনুপ্রেরণার জন্য শুধু পশ্চিমের দিকে তাকাতে হবে না। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মডেলটি ভিন্ন হলেও রোগীর মানবিক প্রয়োজন পূরণে কার্যকর। এখানে সমাজকর্মীরা মূলত পরিবারকেন্দ্রিক সহায়তা দেন। তাঁরা আর্থিক সহায়তা, পুনর্বাসন ও কমিউনিটি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই দেশগুলোতে সমাজকর্মীরা সীমিত সম্পদ নিয়ে কাজ করলেও রোগীর সংকটময় মুহূর্তে তাঁদের পাশে দাঁড়ান।
শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ উদ্যোগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও সামাজিক সহায়তাব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ মডেলের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ নিজস্ব একটি মডেল গড়ে তুলতে পারে।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল একটি ব্যাপক মেডিকেল সোশ্যাল সার্ভিস গড়ে তুলেছে। এর মাধ্যমে অসুস্থতা ও আঘাতজনিত আবেগ, মানসিক, সামাজিক ও পরিচর্যার সমস্যা মোকাবিলায় কষ্টে থাকা রোগী ও তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর দেয়। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাব্যবস্থায় কার্যকরভাবে সমাজসেবা বিভাগকে একীভূত করার একটি অনন্য উদাহরণ এটি।রোগীর তথ্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমাজসেবা বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা সহজ ভাষায় তথ্যবহুল প্রচারপত্র তৈরি করে রোগীর হাতে তুলে দিতে পারে। এ ছাড়া তারা অভিযোগ নিরসনকেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে পারে, যেখানে রোগীর যেকোনো অভিযোগের দ্রুত সমাধান করা যায়। নীতিগতভাবে সমাজকর্মীরা হাসপাতালের নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন, যাতে রোগীর অধিকার নিশ্চিত হয়।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতিতে এই পরিবর্তনগুলো আনতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ জরুরি। প্রথমত, সমাজসেবা বিভাগকে সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা উচিত। এতে প্রশাসনিক সমন্বয় বাড়বে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি হাসপাতালে প্রয়োজন অনুযায়ী পেশাদার সমাজকর্মী নিয়োগ দেওয়া এবং তাঁদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, এই বিভাগের জন্য একটি পৃথক ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে এই বিভাগ আরও কার্যকর ও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের রোগীরা কেবল চিকিৎসা নয়, সম্মান, তথ্য ও সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। হাসপাতাল সমাজসেবা বিভাগ শক্তিশালী করা কেবল রোগীর সন্তুষ্টি উন্নত করার বিষয় নয়, এটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে সম্মান করার বিষয়।
চিকিৎসক, নার্স ও সমাজকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে নিয়মিত আন্তবিভাগীয় বৈঠক এবং যৌথ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা প্রয়োজন। প্রত্যেক কর্মীর ভূমিকা ও দায়িত্ব স্পষ্ট হলে ভুল–বোঝাবুঝি কমে যাবে। হাসপাতালের প্রটোকলে এমন নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যে কোনো রোগী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে সমাজকর্মীর কাছে পাঠানো হবে। এ ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ একটি সমন্বিত মানবিক সেবার পরিবেশ তৈরি করবে।
আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের হাসপাতাল সমাজসেবা বিভাগ শক্তিশালী করার একটি বিস্তৃত কৌশল প্রয়োজন। এই রূপান্তরে যা অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত: দক্ষ কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান; সমাজসেবা বিভাগের কর্মপরিধি ও সেবার প্রসার ঘটানো; এই বিভাগের কর্মীদের হাসপাতালের চিকিৎসা দলের সঙ্গে একীকরণ; এই বিভাগকে হাসপাতালের তথ্য ও যোগাযোগকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং তথ্য-যোগাযোগপ্রযুক্তির কার্যকর সন্নিবেশ ঘটানো ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।
হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এই রূপান্তরে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই রূপান্তরের প্রধান বাধাগুলো হলো সীমিত বাজেট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও এই বায়োমেডিকেল–নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসাব্যবস্থায় এই বিভাগের কাজকে গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা।
একটি শক্তিশালী সমাজসেবা বিভাগ গড়ে তুলতে পারলে বহুমুখী সুফল পাওয়া যাবে। যেমন উন্নত ছাড়পত্র পরিকল্পনার মাধ্যমে পুনরায় ভর্তির হার কমবে; রোগীর সন্তুষ্টি ও চিকিৎসা মেনে চলা উন্নত করবে; পারিবারিক চাপ ও অভিযোগ কমবে এবং সরকারি হাসপাতালের সামগ্রিক সুনাম বৃদ্ধি করবে। তুলনামূলকভাবে সামান্য বিনিয়োগ স্বাস্থ্যসেবার ফলাফল ও রোগীর অভিজ্ঞতায় উল্লেখযোগ্য রিটার্ন দেবে।
শুরুতে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পাইলট প্রোগ্রাম দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। আর দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে হাসপাতাল সমাজকর্মীদের জন্য স্পষ্ট কাজের বিবরণ ও ক্যারিয়ার পথ। আর সে ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত সমাজসেবা অধিদপ্তর মান ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তৈরিতে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো: আর্থিক বাধা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং সাংস্কৃতিক ও ধারণাগত অস্পষ্টতা। সীমিত বাজেট একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এর মোকাবিলায় ধাপে ধাপে পাইলট প্রকল্প চালু ও বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে অর্থ সংস্থান করা যেতে পারে। প্রশাসনিক বিভাজন দূর করতে স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সমাজকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি, যা তাঁদের প্রতি প্রচলিত ধারণাকে পরিবর্তন করবে।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে বাংলাদেশ যদি হাসপাতাল সমাজসেবা বিভাগকে শক্তিশালী করতে পারে, তবে এটি কেবল আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মানই বাড়াবে না; বরং একটি মানবিক ও সংবেদনশীল সমাজ গঠনেও ভূমিকা রাখবে। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, যেমন মাতৃমৃত্যু কমানো থেকে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ—এই সবকিছু আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার রূপান্তরের সক্ষমতা প্রমাণ করে। কেবল নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন করতে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবার মানবিক দিক ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের রোগীরা কেবল চিকিৎসা নয়, সম্মান, তথ্য ও সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। হাসপাতাল সমাজসেবা বিভাগ শক্তিশালী করা কেবল রোগীর সন্তুষ্টি উন্নত করার বিষয় নয়, এটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে সম্মান করার বিষয়।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে বাংলাদেশের প্রতিটি হাসপাতালের করিডর শুধু চিকিৎসা যন্ত্রপাতির শব্দে নয়; বরং যত্নশীল পেশাদারদের কণ্ঠস্বরে প্রতিধ্বনিত হয়। যাঁরা রোগী ও পরিবারকে তাঁদের সবচেয়ে দুর্বল মুহূর্তগুলোতে গাইড করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা ফিরিয়ে আনার প্রেসক্রিপশন স্পষ্ট। এখন আমাদের তা পূরণ করার সাহস দরকার।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 100,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).