চাঁদাবাজি ও স্বজনতোষণ ,ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব

রাজধানীতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে বিনিয়োগ সংলাপ’ অনুষ্ঠান থেকে উঠে আসা বক্তব্যগুলো দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির এক কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর যখন বলেন, ‘দেশে এক দল চাঁদাবাজি থেকে সরে গেছে, আরেক দল সেটা দখল করেছে’, তখন এটি কেবল একটি মন্তব্য থাকে না; এটি বিদ্যমান রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি এক কঠিন অভিযোগ হয়ে দাঁড়ায়। গভর্নরের স্পষ্ট ইঙ্গিত—রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পরিবর্তিত না হলে এই অবস্থারও পরিবর্তন হবে না।

স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পরও চাঁদাবাজির ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, এটি কেবল কোনো নির্দিষ্ট দলের সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে প্রোথিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি। এক পক্ষ ক্ষমতা হারালে আরেক পক্ষ সেই চাঁদাবাজির স্থান দখল করে নিচ্ছে। এই চক্র বিদ্যমান থাকলে বিনিয়োগ এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব।

অন্যদিকে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের মন্তব্য আমাদের ‘স্বজনতোষী পুঁজিবাদ’ বা ‘ক্রনি ক্যাপিটালিজম’-এর সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাঁর মতে, যারা ব্যাংকের ঋণ শোধ করে না, কর দেয় না, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল দেয় না—তারাই এ দেশে সম্পদশালী হচ্ছে। এর জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের দোষ না দিয়ে রাজনীতিকদের দ্বারা তৈরি করা ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। এই সংস্কৃতি যতক্ষণ না ভাঙা যায়, ততক্ষণ অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তেই থাকবে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরীর বক্তব্য, ‘ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না।’ তাঁর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী সমাজের হতাশা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যাঁরা জনগণের টাকা নিয়ে বড় বড় খেলাপি হয়েছেন, তাঁরা দেশে-বিদেশে বহাল তবিয়তেই আছেন। তাঁদের এই সাহস প্রমাণ করে যে টাকা না দিলে কিছু হয় না, এমন ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল অত্যন্ত বেশি। কিন্তু সেটি কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আইনগতভাবে এগোনোর কথা বললেও, ব্যবসায়ীরা চান এমন কিছু উদাহরণ সৃষ্টি হোক, যা প্রমাণ করবে কেউই বিচারের বা আইনের ঊর্ধ্বে নন।

ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ‘ক্র্যাকডাউন’ না করে আইনগতভাবে এগোনোর পক্ষে গভর্নরের যুক্তি যৌক্তিক। তাঁর মতে, কারখানা এবং উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করবে এবং কর্মসংস্থান নষ্ট করবে। বেক্সিমকো টেক্সটাইল বা এসএস পাওয়ারের মতো প্রতিষ্ঠানকে সচল রেখে ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগতভাবে এগোনোর নীতি অবশ্যই স্বাগত জানানোর মতো। জাতীয় সম্পদকে রক্ষা করে ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করাই সুশাসনের সঠিক পথ।

এই সংলাপে উঠে আসা চিত্রটি স্পষ্ট—দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন দুটি চ্যালেঞ্জের মুখে : স্বজনতোষী পুঁজিবাদ এবং প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজির চক্র। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আইনগত প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও দৃশ্যমান করে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে উদাহরণ সৃষ্টি করা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা কাটিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করা। অন্যথায় শুধু ‘আইনগতভাবে এগোচ্ছি’—এই বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে না আর চাঁদাবাজির চক্র কেবল চলতে থাকবে। এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ শপথ গ্রহণ করা জরুরি, নির্বাচিত হলে তাঁরা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দেবেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে, যার নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হবে সামগ্রিক অর্থনীতি ও রাজনীতিকে।


Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

View All resone For signin

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

Recent News

This petiton does not yet have any updates

Taskin Ahmed

Started This Abedon.

06 December 2025   3.4 K

0 have signed. Let’s get to 12,000 !

0%
Treands

At 12,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!

Sign This

By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.

Must see setitions

দুই জেলখানার চিত্র,কারাগার যেন অপরাধের কেন্দ্র না হয়

দুই জেলখানার চিত্র,কারাগার যেন অপরাধের কেন্দ্র না হয়

দেশের সবচেয়ে ‘হাই সিকিউরিটি’ নামধারী দুই কারাগার হলো কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার। এই দুই... Sign This
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই

সম্মানিত পাঠক, একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো একজন ২৭ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যুবককে দুই হাত বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে কিছু... Sign This
জামালপুর শহরে নদ ভরাট,দখলদারি বন্ধে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

জামালপুর শহরে নদ ভরাট,দখলদারি বন্ধে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা...

জামালপুর শহরের চালাপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের একটি শাখা নদ ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের ঘটনা দেশের নদ–নদী, পরিবেশ এবং প্রশাসনিক জবাবদিহি—তিন দিক... Sign This
রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর হামলা,হামলাকারী ও সিন্ডিকেটের কাউকে ছাড় নয়

রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর হামলা,হামলাকারী ও সিন্ডিকেটের কাউকে ছাড়...

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর দিনের আলোয় হামলার ঘটনা বন্দরকে ঘিরে চোরাচালান চক্রের তৎপরতা ও তাদের বেপরোয়া হয়ে... Sign This
রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুন,আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুন,আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে... Sign This
বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদী দখল,পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদী দখল,পৌর কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

‘উন্নয়ন প্রকল্প’ যে অনেক সময় সুপরিকল্পিত দখলদারির অংশ হতে পারে, তার আরেক উদাহরণ দেখা গেল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায়। সেখানে চিত্রা... Sign This
বাউলদের ওপর হামলা,সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে চাই

বাউলদের ওপর হামলা,সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে...

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী ও ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলা ও হুমকি ধারাবাহিক মব সহিংসতা এবং তা ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। গত... Sign This
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ,চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ,চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

দেশে সব সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়ে থাকে ব্যবসায়ী মহলে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য... Sign This
প্রকাশ্যে খুন ও বাসে আগুন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি নজর দিন

প্রকাশ্যে খুন ও বাসে আগুন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি নজর...

চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা এবং বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ... Sign This
ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ

ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ

শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ) সড়ক নির্মাণকাজ চলছে, যার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। তবে প্রকল্পের জমি... Sign This
Loading