নারীর প্রজনন হারের হঠাৎ উল্টো যাত্রা আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও পরিকল্পনা যে ঠিক পথে নেই, তারই প্রতিফলন। অথচ গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে যে অগ্রগতি, তার পেছনে একটা বড় কারণ জন্মহার কমানো ও স্থির অবস্থায় রাখতে পারা। ২০২৪ সালে যেখানে নারীদের মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ২ দশমিক ১৭ ছিল, সেখানে বর্তমানে এ হার ২ দশমিক ৪। স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে এমন উল্টো যাত্রা আর কখনো দেখা যায়নি।
খবর জানাচ্ছে, গত রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফ যৌথভাবে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) ২০২৫ প্রকাশ করে। জরিপে যেমন উঠে এসেছে বিভাগভেদে নারীদের প্রজনন হারে পার্থক্য আছে, আবার দরিদ্র এবং কম শিক্ষিত ও নিরক্ষর নারীদের মধ্যে টিআরএফ বেশি। এ তথ্য আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে দারিদ্র্য ও বৈষম্য না কমালে এবং শিক্ষা ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মোটেই সহজ নয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের টিএফআর ছিল ৬ বা তার বেশি। স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে জাতীয় সমস্যা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। সরকার জনসংখ্যা কমানোকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী মানুষের হাতের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কর্মকৌশল নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সরকারগুলোও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। বেতার, টেলিভিশন, পথনাটক ও গানের মাধ্যমে কম সন্তান রাখার গুরুত্ব জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে। সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলোও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সমন্বিত নীতি ও পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ একত্র হলে যে বড় সফলতা মেলে, তার একটি ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম। স্বাধীনতার পর পরবর্তী চার দশকে ধারাবাহিকভাবে টিআরএফ কমেছে। ২০১২-২০২২ পর্যন্ত সেটা ২ দশমিক ৩-এ স্থির অবস্থায় ছিল। দুই বছর পর সেটা কমে ২ দশমিক ১৭ হলেও এক বছরের ব্যবধানে অনেকটাই বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশের যে জনসংখ্যা নীতি, সেখানে টিআরএফ ২ দশমিক ১ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে হঠাৎ উল্টো যাত্রায় উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ এমনিতেই বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ, প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ১৫০ জনের বেশি মানুষ বাস করে। জনসংখ্যার চাপে কৃষিজমি ক্রমে কমছে, অন্যদিকে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতার কারণে দারিদ্র্য ও হতদরিদ্রের হার বাড়ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমেছে। এ বাস্তবতায় জনসংখ্যা বেড়ে গেলে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান—সবখানেই অতিরিক্ত চাপ তৈরি হবে।
জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে না। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে জোরালো দাবি ওঠে, সরকার কমিশনও গঠন করে। কমিশন তাদের প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিও ঠিক পথে এগোয়নি। গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর মাঠপর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিল। সামগ্রিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে যে শিথিলতা, তার প্রভাব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ওপর পড়েছে বলে আমরা মনে করি।
টিএফআর বেড়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঝুঁকির মুখে ফেলা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের যে সাফল্য, তার উল্টোযাত্রা কেন, নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই সে প্রশ্নে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).