চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সৈকতের নাম একসময় একধরনের মুগ্ধতা নিয়ে উচ্চারিত হতো। ঝাউবাগানের ঘন ছায়া, সূর্যাস্তের অপার্থিব দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ—এসব মিলে পারকির প্রতি পর্যটকদের অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল। শহরের কাছে হওয়ায় পারকি সাধারণ মানুষের নাগালের ভেতরে থাকা এক অনন্য অবকাশস্থল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে বলা যায়, পারকি সৈকত তার সেই চিরচেনা রূপ হারিয়েছে।
সৌন্দর্য হারানোর পেছনে কারণ অনেক। বছরের পর বছর ঝাউগাছের বেষ্টনী দুর্যোগে ধ্বংস হয়েছে, অথচ পুনঃ রোপণে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অবকাঠামোর অভাবে সৈকতে রাত নামলেই নেমে আসে ভুতুড়ে অন্ধকার। খাবার ও বিশ্রামের জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পর্যটকদের নিরাশ করে। একসময় যে সৈকত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত ছিল, সেখানে এখন টোল আদায়, বাগ্বিতণ্ডা আর বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা দর্শনার্থীর মনে দাগ কাটে। পারকির অব্যবস্থাপনা কেবল প্রকৃতির অবহেলা নয়, মানুষের দায়িত্বহীনতারও প্রতিচ্ছবি।
তবু আশার কথা, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এখানে একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সৈকতের অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়বে, পর্যটকের অভিজ্ঞতা হবে সমৃদ্ধ। কিন্তু প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি, এখনো ঝুলে আছে। প্রশ্ন জাগে, এখানে কি ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করা হয়েছে, নাকি দায়িত্ববোধের ঘাটতিই পারকিকে এ অবস্থায় ফেলেছে? উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি আসলে একটি বড় ক্ষতি ডেকে আনছে। প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া বছর মানে পারকির সৌন্দর্য থেকে আরেকটি অধ্যায়ের চিরতরে
মুছে যাওয়া।
সুতরাং জরুরি হলো প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করা। তবে শুধু প্রকল্প শেষ করাই যথেষ্ট নয়, পারকিকে আবার আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সৈকতের বালিয়াড়িতে নতুন করে ঝাউবাগান তৈরি করতে হবে, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা, মানসম্মত রেস্তোরাঁ ও থাকার জায়গা, বিদ্যুৎ ও পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ—এসব এখন অপরিহার্য।
পর্যটন মানে কেবল বিনোদন নয়, এটি একটি অর্থনীতি। পারকিকে পুনরুজ্জীবিত করা মানে স্থানীয় মানুষের আয় বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান এবং দেশের পর্যটন খাতে ইতিবাচক বার্তা। প্রকৃতির দানকে আমরা নষ্ট করেছি, এখন সময় এসেছে প্রকৃতিকে আবার ফিরিয়ে দেওয়ার।
দর্শন বলে, সৌন্দর্য চিরস্থায়ী নয়—যতক্ষণ না আমরা তা রক্ষা করার দায়িত্ব নিই। পারকির হারানো সৌন্দর্য আমাদের সামনে সেই চিরন্তন সত্যই মনে করিয়ে দেয়। তাই আজ পারকিকে ফিরিয়ে আনা কেবল পর্যটনের স্বার্থে নয়; বরং আমাদের দায়িত্ববোধ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অঙ্গীকারের পরীক্ষাও।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 1,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).