মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী ও ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলা ও হুমকি ধারাবাহিক মব সহিংসতা এবং তা ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। গত সাড়ে ১৪ মাসে রাজনীতির নামে হোক আর ধর্মের নামে হোক বা যেকোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে দেশে মব সহিংসতার যে বিস্তার ঘটেছে, তা জননিরাপত্তা নিয়ে নাগরিক উদ্বেগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাজার, খানকা, দরগায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে বাউল–বয়াতিদের ওপর আক্রমণ—কোনো ঘটনাকেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। আইনের দৃষ্টিতে এসব ফৌজদারি অপরাধ। আর এসব কর্মকাণ্ড নিশ্চিতভাবেই যে সহনশীলতা ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে ভেতর থেকে সম্প্রীতির সুতায় বেঁধে রেখেছে, তার মূলে আঘাত। নাজুক সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীগুলোর সুরক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে নেওয়া পদক্ষেপে বিস্তর ফারাক থাকায় বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে আমরা মনে করি।
৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের একটি পালাগানের আসরে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের একটি মন্তব্য ঘিরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীরা তাঁর মুক্তির দাবিতে গত রোববার মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেন। একই দিন ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একদল লোক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। একপর্যায়ে তাদের একটি অংশ আবুল সরকারের অনুসারী ও ভক্তদের ওপর হামলা করে। লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মেরে কয়েকজনকে আহত করে। তাদেরও একজন আহত হয়।
কারও বক্তব্যে কেউ বিক্ষুব্ধ হলে সে ক্ষেত্রে আইনি প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়া যখন চলমান, তখন কর্মসূচি দিয়ে হুমকি ও হামলা করা কেন হবে? পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকার পরও মানিকগঞ্জ প্রশাসন ও পুলিশ কেন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারল না?
এর আগে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে একটি মাজারে হামলা ও কবর থেকে লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেখা গিয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কার পরও আগাম কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছিল সেখানকার প্রশাসন ও পুলিশ।
চব্বিশের ৫ আগস্টের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সুযোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মব সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যায়। পুলিশ পুনর্গঠন করে তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথেষ্ট সময় পেয়েছে বলে মনে করি। মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর যে সহিংসতা ঘটেছে, সেটা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নাজুক সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর ওপর একের পর এক হামলা হলেও সরকার হামলাকারীদের এই বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যে দল-মত-পথের অনুসারী হোক না কেন, একজন নাগরিকের জানমালের ওপর হামলা ও ধর্ম চর্চার স্বাধীনতার ওপর আক্রমণের অধিকার কারও নেই এবং এ রকম কোনো হামলা হলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যর্থতা থেকেই একদল লোক মনে করছে, তারা চাইলেই যেকোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা করার অধিকার রাখে।
নাগরিক সমাজের নানা পক্ষ শুরু থেকেই মব সহিংসতা ঠেকাতে সরকারকে জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। পরিতাপের বিষয় হলো, সরকারের কোনো কোনো অবস্থানের কারণে মব সহিংসতা প্রশ্রয় পাচ্ছে। আমরা দল-মত-পথনির্বিশেষ নাগরিকের জানমাল ও অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপে মিল দেখতে চাই।
বাউল, সুফি দর্শন ও মানবতাবাদী চর্চা এ অঞ্চলের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বাউল, বয়াতি, গায়েনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানিকগঞ্জে হামলার ঘটনায় যুক্তদের চিহ্নিত করে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 15,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).