গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মেহেরপুরের মুজিবনগরে সাইফুল শেখ (৫৫) পেঁয়াজখেতেই বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন। সাইফুল শেখ কেন স্বাধীনতা দিবসকেই আত্মহত্যার উপযুক্ত দিন মনে করেছিলেন, তা আমাদের জানা নেই। তবে অনেকেই এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে ধারণা করেছেন। সাইফুল শেখের আগেও আরও অনেক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তখনো অধিকাংশ মানুষের একই ধারণা ছিল।
১৮ আগস্ট রাজশাহীর মোহনপুরে আকবর হোসেন নামের এক কৃষক নিজের পানের বরজে গলায় দড়ি দেন। ছেলের চোখের সামনে বাবা ঝুলে গিয়েছিলেন ঋণের ফাঁসে। আকবর হোসেনের ছেলে সুজন শাহ বলেন, ‘আমার বাবা এনজিও থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন।...কিন্তু এবার পানের দাম না পেয়ে ঋণ পরিশোধ করতে কষ্ট হচ্ছিল। প্রতিদিন কিস্তির জন্য এনজিওর লোকেরা চাপ দিতেন। ঋণের চাপে পড়ে বাবা আত্মহত্যা করেছেন।’ (সমকাল, ১৮ আগস্ট ২০২৫)
একই জেলার পবা উপজেলার আরেক কৃষক মিনারুল ১৪ আগস্ট স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে তিন রেখে যান একটি চিরকুট। তাতে লেখা ছিল, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।’
২৬ মার্চ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহী, মাগুরা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, ফরিদপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। অন্তত নয়টি আত্মহত্যার ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। আর কত কৃষকের আত্মহত্যার খবর পত্রিকায় আসেনি, তা আমাদের জানাও নেই।
এ রকম অবস্থায় কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলব? আত্মহত্যার সংখ্যা দিয়ে সংকটকে ব্যাখ্যা করব, নাকি সংকটের কারণ দিয়ে তা ব্যাখ্যা করতে হবে?
কেউ যদি বলেন, পাশের দেশ ভারতে প্রতিবছর হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেন; তাই বাংলাদেশে এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই, তাহলে তা হবে সংকটকে না দেখার ভান করা। একটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং তার কারণ বিশ্লেষণ করে উদ্ভূত সংকট অনুধাবন করা সম্ভব।
ভারতে কৃষকের আত্মহত্যার সংকট নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য অনেক কারণের মধ্যে ঋণগ্রস্ততা কৃষকদের আত্মহত্যার একটি কারণ। তবে ভারতে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়। ভারত আয়তনে বাংলাদেশের ২৩ গুণ বড়। এ ছাড়া ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার প্রবণতা কম।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মহত্যার সংখ্যা দিয়ে কৃষি ও কৃষকের সংকট বুঝতে চাইলে তা হবে উদ্ভূত সমস্যার কারণগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। একজন কৃষকই–বা কেন আত্মহত্যা করবেন, এটা বোঝার মধ্য দিয়ে সংকটকে বুঝতে হবে।
ঢাকা শহরে মাঝেমধ্যে দিনমজুর আর রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে কৃষি পেশা ছেড়ে রাজধানীতে চলে এসেছেন। আবার অনেক প্রান্তিক কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে জমি বেচে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, বেছে নিয়েছেন শহরের অনিশ্চিত জীবন। অনেকেই আবার পালিয়ে এসেছেন পরিবারকে রেখে।
এ বছর মার্চে রংপুরে একটি কৃষক সম্মেলনে গিয়ে দেখি, বেশির ভাগ কৃষকই নারী। অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, এত নারী কৃষক কীভাবে হলো?
জানতে পারলাম, ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেক পরিবারের কৃষকেরা হয় শহরে চলে গেছেন, না হয় পালিয়ে চলে গেছেন স্ত্রী ও পুত্র–কন্যা রেখে। বাধ্য হয়ে নারীরা খেতমজুরের কাজ করছেন কম মজুরিতে।
ঋণগ্রস্ত এই কৃষকেরা কৃষি পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন, এটাই একটা বড় সংকট তৈরি করেছে। আত্মহত্যা না করলেও পালিয়ে বেঁচে থাকা কি মৃত্যুর চেয়ে কম?
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অক্ষমতা ও এনজিওর ঋণ
কৃষি খাতে মোট ঋণের মাত্র ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ যায় কৃষকদের হাতে। অথচ দেশের আড়াই কোটি মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত, অর্থাৎ ঋণ প্রাপ্তির দিক থেকে কৃষকেরা বৈষম্যের শিকার।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) বলছে, এনজিও, আত্মীয়স্বজন, বেসরকারি ব্যাংক, দাদন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বেসরকারি উৎস থেকে কৃষক ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ গ্রহণ করেন।
এসব ঋণের সুদ ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ। আর সরকারের কৃষি ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে যে কৃষিঋণ দেয়, তার পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের সিংহভাগ কৃষক সরকারি বিশেষায়িত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ফসল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিঋণ পান না। ফলে প্রকৃত কৃষক বাধ্য হন বেসরকারি উৎস থেকে ঋণ নিতে। গ্রামে এখনো মহাজনি প্রথা টিকে আছে। এর আধুনিক রূপ হলো এনজিও ও সমিতিগুলো। এনজিওগুলো ব্যাংক থেকে ১২–১৩ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকদের কাছে তা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে দেয়। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়, এমনকি ঋণ নেওয়ার সাত দিন পর থেকেই আদায় শুরু হয়; তখনো হয়তো কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারেননি, আয়ের কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি।
এ রকম অবস্থায় কৃষক এক এনজিওর ঋণ শোধ করতে আরেক এনজিওর কাছে যান, এভাবেই তৈরি হয় ঋণের জাল।
কোনো কৃষকের ঘরে গিয়ে কিস্তি আদায়ের দৃশ্য যেন দুঃসহ ঘটনা—ঋণ আদায়কারীরা বসে থাকেন দরজায়, কড়া নাড়েন বারবার। পরিবার আতঙ্কে থাকে। অনেক সময় তিক্ত ভাষায় হুমকি দেন। এ চাপই অনেক কৃষককে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলে; শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু সেই ব্যাংকগুলোই দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যর্থ ব্যবস্থাপনায় ভেঙে পড়েছে। কর্মকর্তাদের বদলি–বাণিজ্য, সিন্ডিকেট আর অব্যবস্থাপনায় কৃষকের জন্য এ ব্যাংকগুলো হয়ে উঠেছে ‘অপ্রবেশযোগ্য দুর্গ’। এমনিতেই ঋণ প্রাপ্তিতে তাঁরা বৈষম্যের শিকার। তার ওপর যে অল্প ঋণ রাষ্ট্রীয় ব্যাংক দেয়, তা যদি এত কঠিন হয়, তাহলে সংকট থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে?
গত ছয় বছরে কৃষি ব্যাংক ১৯ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। খেলাপি ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে আগের বছর তা ছিল ১৩ শতাংশ। এর মূল কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত—ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমা ছয় মাস থেকে আইএমএফের শর্ত মেনে তিন মাসে নামানো।
কৃষি ব্যাংকের অধিকাংশ ঋণ প্রান্তিক কৃষকের মৌসুমি আবাদে ব্যবহৃত হয়, যা তুলতে তিন মাসের বেশি সময় লাগে। কৃষক সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পারায় শস্যঋণ বিতরণ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্য ব্যাংকের নীতিমালা কৃষকের ওপর চাপানো অন্যায়। প্রান্তিক কৃষকের বাস্তবতার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এ নীতিমালার পরিবর্তন জরুরি। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ঋণ বিতরণে সক্ষমতা হারালে কৃষকের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার দুঃসহ চিত্র
কৃষকের আয় কমছে, কিন্তু খরচ বাড়ছে দ্বিগুণ। সার, সেচ, বীজ—সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। ফসল ঘরে তুললেও কৃষক লোকসান থেকে বাঁচতে পারছেন না। বীজের সংকট দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। বিএডিসি সময়মতো বীজ সরবরাহ করতে পারছে না। হিমাগারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আলু, পেঁয়াজ, শাকসবজি সংরক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কৃষক বাধ্য হচ্ছেন লোকসানে ফসল বিক্রি করতে।
অন্যদিকে দেশে সারের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। আশুগঞ্জ সার কারখানার মতো পুরোনো কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। ফলে সারের বাজার সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক দামের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
সরকার সারে ভর্তুকি দিলেও কৃষকেরা সে সুবিধা পান না। ডিলারদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রাখছে। সরকারি দরে সার পাওয়া যায় না, বাজারে কিনতে হয় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি দামে।
অন্যদিকে ভর্তুকি দেওয়া সার মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশে এক বস্তা সার ১ হাজার ২০০ টাকা, মিয়ানমারে ৬ হাজার টাকা—এই বিশাল লাভের লোভে পাচারকারীরা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে পাচার করছে। ফলে দেশে কৃত্রিম সংকট দেখা দিচ্ছে। কৃষক চাষ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এত সমস্যার মধ্যে নতুন করে সারের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। গত আগস্ট মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়লে সরাসরি বাড়বে সারের উৎপাদন খরচ।
এখন এক কেজি ইউরিয়া সার উৎপাদনে খরচ ৩৮ টাকা। সরকার ভর্তুকি দিয়ে তা ২৭ টাকায় কৃষকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। গ্যাসের দাম বাড়লে প্রতি কেজি সারের দাম বেড়ে হবে ৫৬ টাকা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে কমিটি হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়লে সার উৎপাদনে যে বাড়তি টাকা লাগবে, তা সরকার দেবে। আসলে সরকার কতটুকু দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
একদিকে আইএমএফের কথা শুনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। অন্যদিকে সারে ভর্তুকি বাড়লে আইএমএফ আবার সারে ভর্তুকি কমানোর প্রেসক্রিপশন দেবে। আবার ভর্তুকি যদি কৃষকের কাছে না পৌঁছায় সেই অজুহাত দেখিয়ে আইএমএফের কথামতো সরকার আবার সারের দাম বাড়াবে। এ যেন এক অনন্ত চক্র, যার শিকার হবেন মূলত কৃষকেরাই।
করণীয়
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুর্বলতা, এনজিওর ঋণের দাপট, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ডিলার সিন্ডিকেটের কারণে কৃষক আত্মহত্যায় প্ররোচিত হচ্ছেন—কেবল একা নন, পরিবারসহ। এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হলে সারের দাম না বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ভাঙা ও কালোবাজারি দমন করতে হবে।
দেশীয় সার উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষিঋণের শর্ত শিথিল করে ফসল বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে হবে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়িয়ে গ্রামে গ্রামে কৃষিঋণ বুথ চালু করতে হবে। এনজিওনির্ভরতা কমিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণের জন্য নির্ধারণ করে রাখলেও অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক তা মানছে না। কৃষিঋণ বিতরণে এমন নিয়ম করতে হবে, যাতে কৃষক ঋণ নিয়ে যথেষ্ট সময় পান পরিশোধের জন্য।
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণ ও ভর্তুকি দিয়ে সংরক্ষণ ব্যয় কমাতে হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজারজাতকরণে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে এবং উৎপাদন খরচ ও লাভের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশের কৃষক বারবার প্রমাণ করেছেন, সব প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা খাদ্যনিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় কৃষকের ঘামে দেশের মানুষ বেঁচে ছিল। অথচ আজ সেই কৃষক নিজেই সংকটে।
বেশ কয়েকটি জেলায় এ বছর কৃষকের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেলেও আমাদের রাষ্ট্র বরাবরের মতো নির্বিকার। ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। কৃষি খাতে কাঠামোগত সংস্কারের মধ্য দিয়েই এ হত্যাকাণ্ড রুখতে হবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 5,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).