রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আবারও অগ্নিকাণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নিম্ন আয়ের মানুষের অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হয়। ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বাঁশ-কাঠ ও টিনের ঘরের কারণে এমনিতেই বস্তিটি অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য উর্বর ক্ষেত্র, এরপর আবার যদি আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা না থাকে, তার ফল কতটা বিধ্বংসী হতে পারে, গত মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ড তার চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত। এ অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ব্লকের এক হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে, সর্বস্ব হারিয়েছে অনেক পরিবার।
খবর জানাচ্ছে, মঙ্গলবার বিকেলে কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকায় আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুরোপুরি নেভাতে আরও কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। যানজটের কারণে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোর ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়া এবং কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় আগুন এতটা বিধ্বংসী রূপ নেয়।
কড়াইল বস্তিসহ রাজধানীর বস্তিগুলো অগ্নিদুর্ঘটনার দিক থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশে সর্বশেষ বস্তিশুমারির তথ্য বলছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ছোট-বড় ৩ হাজার ৩৯৪টি বস্তিতে বসবাস করেন প্রায় ৬ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ তথ্য নিয়ে তখনই বড় ধরনের সংশয় ছিল। ফলে ১১ বছর পর বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, দারিদ্র্য, নদীভাঙন, গ্রাম-মফস্সলে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, ঢাকামুখী যে জনস্রোত তার বড় একটা অংশ বস্তিতে আশ্রয় নেয়। ঘিঞ্জি পরিবেশ, সরু ঢোকার পথ, ছোট খুপরি ঘর, নোংরা টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট—সব মিলিয়ে যে জীবন বস্তিবাসী যাপন করেন, সেটা এককথায় মানবেতর।
প্রায় ৯০ একর জায়গায় ওপর গড়ে ওঠা কড়াইল বস্তিতে ১০ হাজারের বেশি ঘর আছে। গত দুই বছরে সেখানে চার দফা অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডে শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেক মানুষ। খোলা আকাশের নিচে শিশু, বৃদ্ধসহ অনেককেই রাত কাটাতে হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কড়াইল বস্তির গৃহহারা মানুষের পুনর্বাসনে সব রকমের সহায়তার কথা ঘোষণা করেছেন। আমরা আশা করি, জেলা পরিষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আশু ত্রাণসহায়তা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে।
নগর ব্যবস্থাপনা ও নগর অর্থনীতি সচল রাখতে বস্তিবাসীর ভূমিকা অনস্বীকার্য হলেও তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে ও ন্যূনতম নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে বিগত কোনো সরকারই উদ্যোগ নেয়নি। সরকারি জায়গায় বেশির ভাগ বস্তি গড়ে উঠলেও রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো এর নিয়ন্ত্রণ করে। ঘরভাড়া থেকে শুরু করে পানি-বিদ্যুতের মতো পরিষেবার নামে তাঁদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। মোটা অঙ্কের লেনদেনের সুযোগ থাকায় বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলে, তাতে আগুন দিয়ে ঘর পোড়ানোর মতো ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়।
কড়াইল বস্তিতে বারবার অগ্নিকাণ্ডের কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বের করতে হবে। এ রকম একটি ঘিঞ্জি বস্তি, যেখানে কয়েক লাখ মানুষ বাস করেন, সেখানে অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকাটা, মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন এবং সেখানকার তরুণদের অগ্নিনিরাপত্তা–সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে, অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বস্তির অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 15,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).