সুপেয় ও ব্যবহারযোগ্য পানির জন্য খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের মানুষের সংগ্রাম জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এক নির্মম বাস্তবতা। প্রায় ১৫ হাজার মানুষের চারটি গ্রামের নারীদের প্রতিদিন কেবল বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির জন্য দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। টেকসই উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত থাকা প্রান্তিক এলাকার মানুষ কেন্দ্রে বসে থাকা নীতিনির্ধারকদের কাছে ‘গুরুত্বহীনই’ থেকে গেল।
নোনাপানির দাপটের কাছে কয়রার গ্রামগুলোর মানুষের জীবন বন্দী হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কয়রার নয়ানী গ্রামের ভূগোল বদলে যায়। মাটির পথ চলে গেছে খালের গর্ভে। দীর্ঘদিন ধরে কাদা মাড়িয়ে ও সাঁতরে মিষ্টি পানির একমাত্র আধার পদ্মপুকুরে যাতায়াত করতে হতো নারীদের। পরে ২০২১-২২ অর্থবছরে একটি প্রকল্পের অধীনে ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৮ লাখ টাকার এ প্রকল্প ছিল অত্যন্ত দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ। প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর লোহার ও টিনের সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি করা সেতুটি লবণাক্ত বাতাস ও দুর্বল নির্মাণশৈলীর কারণে ছয় মাসের মধ্যেই অকেজো হয়ে যায়। আবারও পুরোনো দুর্দশাই ফিরে এসেছে উপকূলের নারীদের জন্য।
বরাবরের মতোই এখানেও প্রকল্প বাস্তবায়নের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলছেন, তাঁরা এখন বড় বাজেট পেলে নতুন করে সংস্কার করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো প্রথমবার যখন ১৮ লাখ টাকার বাজেট অপচয় হলো, তখন কেন গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়নি? বিশুদ্ধ পানির জন্য পদ্মপুকুরে যেতে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে একটি স্থায়ী রাস্তা চেয়েছিলেন। তখন উপজেলা প্রশাসনের ১৮ লাখ টাকা খরচ করে একটি অস্থায়ী ভাসমান সেতু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন এসে স্পষ্ট হলো সেই সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। ব্যয়বহুল প্রকল্প এড়াতে এমন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেখানকার মানুষের দুর্ভোগের অর্থমূল্য অপরিসীম। ১৫ হাজার মানুষের বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তার জন্য একটি বড় প্রকল্প কেন নেওয়া হবে না?
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা একটি জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। এই সংকট মোকাবিলায় ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসনের লোকদেখানো প্রকল্প নয়, বরং প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্ব। দেশজুড়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, তার হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণের মাথাপিছু বহন করতে হয় উপকূলের এসব মানুষকেও। কিন্তু সেসব প্রকল্পের কতটা সুবিধাভোগী হন তাঁরা। অথচ দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত একটি টেকসই প্রকল্পের মাধ্যমে কেন তাঁদের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে না। একটি স্থায়ী পানি শোধনাগার করতে কত টাকা লাগে? উপকূলের এসব প্রান্তিক মানুষ আর কত দিন এই রাষ্ট্রের ‘অনাগরিক’ হয়ে থাকবেন?
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).