অর্থনীতির স্বাস্থ্য যে মোটেই সুবিধাজনক নয়, দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো সেই বার্তাই দিয়ে আসছিল। দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ভাটা, মূল্যস্ফীতির চাপ—সব মিলিয়ে নাগরিকদের বিশাল একটি অংশকে কায়দা করেই জীবন যাপন করতে হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের তিন সংস্থা যৌথ প্রতিবেদনে খাদ্যনিরাপত্তা ও অপুষ্টি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
খবর জানাচ্ছে, বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট এবং জাতিসংঘের এফএও, ডব্লিউএফপি ও ইউনিসেফের আইপিসি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দুর্যাগপ্রবণ জেলাগুলোর ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় পড়তে যাচ্ছে। চরম অপুষ্টির শিকার হতে পারে ১৬ লাখ শিশু। দেশের ৩৬টি জেলায় বসবাসকারী ৯ কোটি ৬৬ লাখ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
খাদ্যঘাটতি, অপুষ্টি ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে মূল্যায়নের জন্য যে পাঁচটি ধাপ নির্ধারণ করা হয়েছে তার তৃতীয় ধাপ, অর্থাৎ সংকটে রয়েছে ১৩ জেলার ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এই জেলাগুলোর মধ্যে উপকূলীয়, পাহাড়ি জেলাগুলো যেমন আছে, আবার উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলাও আছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নেওয়া কক্সবাজার জেলাও রয়েছে।
সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমলেও প্রাথমিকভাবে যে কারণগুলো এই পরিস্থিতি তৈরি করছে, তার সবগুলোই বিদ্যমান রয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু বিপর্যয়, তহবিলের ঘাটতি, খাদ্যবৈচিত্র্যের অভাব—এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে ধরনের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা দরকার, নীতিনির্ধারণী জায়গায় তার বিস্তর ঘাটতি দেখা যায়। তবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করা গেলে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করা যেমন সম্ভব নয়, মানুষকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনাও দুরূহ। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায় যে বহুমাত্রিক সংকট ডেকে আনতে পারে, খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি তার বড় একটা দৃষ্টান্ত।
প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার জরুরি অবস্থায় পড়তে পারে। কক্সবাজারে, বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি খ্যাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই জেলার ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন। ফলে কক্সবাজারসহ অত্যধিক ঝুঁকিতে থাকা ১৩ জেলাকে নিয়ে সরকারের আশু বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। প্রতিটি জেলায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও প্রাকৃতিকভাবে দুর্গম জেলাগুলোতে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। কৃষির বহুমুখীকরণের পাশাপাশি কৃষকেরা যাতে তাঁদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পান, সেদিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে।
যৌথ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮টি দুর্যোগপ্রবণ জেলায় ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টির সম্মুখীন হচ্ছে। ১ লাখ ১৭ হাজার অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুকে বুকের দুধ পান করানো মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অপুষ্টিতে ভোগার প্রভাব বহুমুখী ও দীর্ঘমেয়াদি। অপুষ্টি নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশু পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে না। ফলে অর্থনীতিও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারবে না।
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টির এই তথ্য কারও জন্যই স্বস্তিদায়ক নয়। সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি উদ্যোক্তা সবাইকেই খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টি কমাতে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).