অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের গাইড বইয়ের প্রতি নির্ভরশীল করে তুলে দেশে এক রমরমা ব্যবসা গড়ে উঠেছে। দরিদ্র অভিভাবকদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। ভোলার মতো একটি উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, একজন মা তাঁর সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়ে নিজের নাকফুল পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হন, সেখানে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ কতটা নির্লজ্জভাবে সমাজকে গ্রাস করেছে, তা স্পষ্ট হয়।
ভোলায় গাইড বই কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা কেবল আর্থিক বোঝা তৈরি করছে না, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকেও ব্যাহত করছে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী হজরত আলীর মা শাহিনুর বেগমকে তাঁর প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি হিসেবে পাওয়া সামান্য সঞ্চয় থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকা খরচ করে গাইড বই কিনতে হয়েছে। অন্যদিকে হাসিনা বানুকে মেয়ের জন্য গাইড বই কিনতে গিয়ে বিয়ের স্মৃতিচিহ্ন নাকফুল বিক্রি করতে হয়েছে। এ ঘটনাগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিক অবক্ষয়ের করুণ প্রতিচ্ছবি।
শিক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, পাঠ্যবই ও শ্রেণিকক্ষের শিক্ষাই যথেষ্ট। গাইড বইয়ের প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কিছু শিক্ষকের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও প্রকাশনা সংস্থাগুলোর যোগসাজশে গাইড বই কেনা শিক্ষার্থীদের জন্য এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, প্রকাশনা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে শিক্ষক সমিতি, প্রধান শিক্ষক ও কতিপয় শিক্ষক অভিভাবকদের ওপর গাইড বই কেনার জন্য চাপ দেন। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নও তৈরি হয় গাইড বই অনুসরণ করে। যেসব শিক্ষক এই অনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত নন, তাঁদের প্রশ্নপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়। এই চিত্র একদিকে যেমন শিক্ষকদের সততা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মেধার স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মতে, গাইড বই কেনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও কেন এ আইন মানা হচ্ছে না? কেন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? এই প্রশ্নগুলো সামনে চলে আসে। গাইড বইয়ের ব্যবসা বন্ধে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা একধরনের পরোক্ষ সমর্থনকেই ইঙ্গিত করে।
শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। এটি একটি মৌলিক অধিকার। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য গাইড বইয়ের বাড়তি খরচ একপ্রকার শাস্তি। এই অনৈতিক চক্র ভাঙতে হলে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা। শিক্ষকদের লোভ ও প্রকাশনা সংস্থার আগ্রাসী বাণিজ্যিকীকরণের লাগাম টেনে ধরতেই হবে যেকোনো প্রকারে। স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা পাঠানো হোক। আইন অমান্যকারী ও যোগসাজশকারীদের কোনোভাবেই ছাড় নয়।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 70,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).