জ্বালানির মতো কৌশলগত পণ্যে শুল্ক-করের বোঝা ও বিপিসির মুনাফা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি; বরং মূল্যস্ফীতি এখনো ৮-এর ওপরে।
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের নাগরিকদের ঘাড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বোঝা চেপে বসেছিল, তাতে বড় অবদান রেখেছিল জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমুখী দর। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাসের তুলনায় এ বছরের অক্টোবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ২৫ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে কমেছে মাত্র ৪ শতাংশের মতো। সরকার জ্বালানি পণ্যকে সেবার বদলে মুনাফা ও রাজস্ব আয়ের নীতি হিসেবে গ্রহণ করায় তার মাশুল গুনতে হচ্ছে নাগরিকদের।
মূল্যস্ফীতিকে নীরব মহামারি বলা হয়, তার কারণ হচ্ছে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান পড়ে যায়। বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ের সাম্প্রতিক জরিপগুলো প্রমাণ দিচ্ছে, দেশে দারিদ্র্য ও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, তাঁদের আয় কমেছে এবং আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা বর্তমান নাগরিক অসন্তুষ্টির বড় কারণ।
বিগত সরকারের আমলে ভুল জ্বালানি নীতির সুফল ভোগ করেছিল সরকারঘনিষ্ঠ কিছু গোষ্ঠী; বিপরীতে অর্থনীতি ও নাগরিকদের জন্য সেটি স্থায়ী দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও নাগরিকের স্বার্থ রক্ষিত হয়, এমন একটি জ্বালানি নীতি করবে। দায়মুক্তি আইন বাদ দেওয়ার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করলেও জ্বালানি নীতি প্রণয়নে উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং বিগত সরকারগুলোর মতোই জ্বালানি খাত রাজস্ব আয় ও বিপিসির মুনাফার উৎস হিসেবে থেকে গেছে।
অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের ওপর ভর করে বিগত সরকার অর্থনীতিতে যে সংকট ডেকে এনেছিল, তা থেকে উদ্ধার পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ নিতে হয়েছিল। ঋণের শর্ত হিসেবেই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে নির্বাহী আদেশের পথ থেকে সরে এসে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে দাম ঠিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের সূত্রে যে ফাঁকফোকর আছে, গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বিপিসির ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার মুনাফায় তার প্রমাণ দেয়। এ ছাড়া জ্বালানি তেল থেকে শুল্ক-কর বাবদ সরকার প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে।
সরকারের যুক্তি হলো বিপিসির মুনাফা ও শুল্ক-কর থেকে আয় হওয়া টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানির মতো কৌশলগত পণ্য, যার কারণে পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে-কমে, সেখানে সরকারের ব্যবসা করার সুযোগ থাকাটা কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে? জ্বালানির দাম বাড়লে ভোক্তাকে বাড়তি দামেই সেটি কিনতে হয়, তাহলে দাম কমলে কেন তাঁরা তার সুফল পাবেন না। প্রতিবেশী দেশে তেল পাচার হয়ে যাবে—এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জ্বালানি তেলে শুল্ক-করের বোঝা চাপিয়ে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। প্রত্যক্ষ করের উৎস না বাড়িয়ে জ্বালানি তেল থেকে রাজস্ব আয়ের সহজ পথ থেকেও সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিপিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তেল চুরি, দুর্নীতি ও অদক্ষতার যে অভিযোগ আছে, তারও যথাযথ তদন্ত হতে হবে। আমরা মনে করি, বিপিসির আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 50,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).