নোয়াখালী ও ফেনী—দেশের এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যা আবারও প্রমাণ করে দিল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের দুর্বলতা কতটা প্রকট। হাজার হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী, সহায়-সম্বল হারিয়েছেন অনেকে, আর ফসলি জমি থেকে মৎস্য খাত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কেবল সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছনে রয়েছে হাজারো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর চাপা কান্না। এমন পরিস্থিতি আমাদের উদ্বিগ্ন করে।
প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নোয়াখালীতে ২৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে, যার বেশির ভাগই মৎস্য খাতে—প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা। কৃষকের চোখের সামনে ভেসে গেছে সোনালি স্বপ্ন, আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। অন্যদিকে ফেনীতেও প্রায় ১৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যার প্রায় ৯০ কোটি টাকাই সড়কের। রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত, বেড়িবাঁধ ভেঙে জনবসতি প্লাবিত হয়েছে। গত বছরের ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকার ক্ষতির পর এ বছরও এমন বিশাল অঙ্কের ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না।
বারবার কেন একই চিত্র? প্রতিবছর বর্ষা এলেই আমরা বন্যার কবলে পড়ি, তারপর শুরু হয় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব–নিকাশ। কিন্তু এই দুর্দশার স্থায়ী সমাধানে আমরা কতটুকু এগোতে পেরেছি? নোয়াখালী খাল দিয়ে পানি নামার ধীরগতির কারণে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, যা স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। ফেনীতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এসব বাঁধ মেরামতে আর বিলম্ব নয়। নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ। প্রতিটি উপজেলায় খালগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। আর কোনো পুকুর হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে এবং নতুন করে ত্রাণ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেবল ত্রাণ বিতরণে সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের প্রয়োজন, একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। নদী খনন, বেড়িবাঁধ শক্তিশালীকরণ, উন্নত নিষ্কাশনব্যবস্থা এবং আধুনিক বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণব্যবস্থার উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
নোয়াখালী ও ফেনীর মতো জেলাগুলোয় অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নেমে যেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঘরবাড়ি তুলছেন। রাস্তাঘাটও হচ্ছে পরিকল্পনাহীন। পৌর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ মিলে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পানি নেমে যাওয়ার পথ তৈরি করতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পানিবন্দী মানুষদেরও বুঝতে হবে, নিজেদের ভুলেও তাঁরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দেশের ওই অঞ্চল এখন বন্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছে, ফলে এ এলাকার দিকে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 50,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).