জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মানবাধিকার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যে আহ্বান জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। রোববার পাঠানো যৌথ চিঠিতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে নির্বিচার গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও খারিজের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গায়েবি মামলা ও নির্বিচার গ্রেপ্তার হয়ে উঠেছিল শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধী মত দমনের অন্যতম রাজনৈতিক অস্ত্র। এটি ছিল দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগের প্রধান একটি জায়গা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও ঢালাও মামলা ও নির্বিচার গ্রেপ্তার মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বড় একটি উদ্বেগের কারণ রয়ে গেছে। বিশেষ করে অসংখ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টা নানা সময়ে ঢালাও মামলার প্রবণতাকে বিব্রতকর বলেছেন।
সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা একাধিকবার স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে অনেকের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলা পর্যালোচনা ও নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তির আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই আশ্বাস কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা, সরকারের ১৪ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও সাংবাদিকসহ অসংখ্য ব্যক্তি যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়াই কারাগারে আটক আছেন। অভিযোগ আছে, জামিনের অধিকার থাকা সত্ত্বেও অনেককে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে জামিন দেওয়া হয়নি। এটা নিশ্চিতভাবেই ন্যায়বিচারের মূলনীতির পরিপন্থী।
যৌথ চিঠিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মৌলিক স্বাধীনতা পুনর্বহাল, আইন সংস্কার, গুম, অন্যান্য নিপীড়নের তদন্তসহ বেশ কিছু পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের ব্যাপারে জোর দিয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি কর্তব্য বলে আমরা মনে করি। এর পাশাপাশি চিঠিতে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে ও বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা যায়, তার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে (আইসিটি) প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে।
এইচআরডব্লিউ, সিপিজে, সিভিকাস, ফোরটিফাই রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার এবং ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করে আসছে। বিগত সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে এই সংস্থাগুলো সব সময়ই সোচ্চার থেকেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি।
ছয়টি সংস্থা তাদের চিঠিতে নিরাপত্তা খাতের সংস্কার যেমন র্যাব বিলুপ্তি, ডিজিএফআইয়ের সংস্কার, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বেসামরিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে বেসামরিক আদালত আইসিটির এখতিয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার কমিশনকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সংস্কার এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মতো নিপীড়নমূলক আইন সংস্কার অথবা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তারা এগুলো সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে।
আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক ছয় মানবাধিকার সংগঠনের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করবে। নির্বাচনের আগে মানবাধিকার পরিসর বাড়ানোর দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে। ঢালাও মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার করার যে অভিযোগ উঠেছে, সরকারের উচিত সেগুলো পর্যালোচনা করা ও নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).