পাথরচোর ঠেকানো যাচ্ছে না, ভোটচোর ঠেকানো যাবে?

গণপিটুনির মতো গণলুটের আনন্দ আলাদা। গণপিটুনিতে লোক মরে কিন্তু খুনের দায় কাউকে নিতে হয় না। এ বলে, ‘আমি তো মোটে একটা ঘুষি মারছি’, ও বলে, ‘আমি সামান্য দুইটা চড় মারছিলাম’, আরেকজন বলে, ‘আমি খালি বুকের ওপর ছোট্ট একটা পাড়া দিছিলাম’। পুলিশ আসে। লাশ নিয়ে যায়। মামলায় লেখে ‘মবের কবলে পড়ে মৃত্যু’। শ খানিক অজ্ঞাত লোক আসামি হয়। তারপর ঘটনা শেষ।

গণলুট বা গণচুরিও তাই। এখানেও আয়েশ করে খায়েশ মেটানো যায়। লুটপাট শেষ হওয়ার পর এ বলে, ‘আমি কিছু করি নাই’, ও বলে ‘আমি কিছু জানি না।’ মাঝখান থেকে বিরাট গোডাউন ফাঁকা হয়ে যায়। পরে পুলিশের শোডাউন হয়। সবাই বলে পাবলিক লুটপাট করে নিয়ে গেছে। কিন্তু ‘পাবলিকের মধ্যে আমিও ছিলাম’—এই কথা কেউ বলে না। সব দায় পড়ে অশরীরী ‘পাবলিকের’ ঘাড়ে; ব্যক্তির ঘাড়ে পড়ে না।

সিলেটের সাদাপাথর এলাকার পাথর লুটের ছবি দেখে মনে হলো, যাঁরা শত শত নৌকা নিয়ে এসে কোদাল-বেলচা দিয়ে উন্মাদের মতো পাথর তুলে নিচ্ছেন, তাঁরা নির্ঘাত গণপিটুনিতে যোগ দিয়ে ‘হাতের সুখ’ নেওয়ার মতো সুখ পেয়েছেন। হরিলুটের বাতাসা কুড়ানোর সাথে তাঁদের পাথর কুড়ানোর মিল পাওয়া গেছে।

মেঘালয় থেকে নেমে আসা বরফ গলা ছোট্ট নদীর পাড় ধরে প্রকৃতির বিছিয়ে রাখা লাখ লাখ পাথর এখন নাই হয়ে গেছে। সবার চোখের সামনে সেগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। সাদাপাথর এখন ‘কালাবালু’ হয়ে গেছে।

এই পাথর যেভাবে গায়েব করা হলো, তাকে চুরি নাকি ডাকাতি নাকি ছিনতাই নাকি লুট বলব বুঝে উঠতে পারছি না। হাজার হাজার শ্রমিক লাগিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা পাথর সরিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাঁরা ডাকাতের মতো জানে মারার হুমকি দিয়েছেন। সরকারের উপদেষ্টারা পর্যন্ত তাঁদের থামাতে ফেল মেরেছেন।

আদতে এখানে যা হয়েছে তার নাম ‘সর্বদলীয় লুট’। এখানে হয়েছে একটা জাতীয় ঐকমত্যের ডাকাতি। এই ডাকাতির সময় মাঝে মাঝে ‘আমি খাঁড়ায়ে যাব, আপনি আমারে বসায়ে দেবেন’ স্টাইলে কখনো কখনো পুলিশ এসে ধাওয়া দিয়েছে; তখন শ্রমিকেরা সরে গেছেন। রাতে আবার শ্রমিকেরা নৌকা নিয়ে হাজির হয়েছেন। পুলিশকে সম্মান দেখিয়ে মাঝে মাঝে তাঁরা দিবালোকের লুট স্থগিত রেখে রাতের অন্ধকারে সর্বদলীয় চুরি চালিয়ে গেছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের দিন কয়েক পর থেকেই এই পাথর লুটের মচ্ছবের শুরু। সরকারের দিক থেকে ‘জানতাম না তো!’ , ‘অভিযোগ পাই নাই তো!’ টাইপের দায় এড়ানো কথা আসতে পারত। তবে তা আসেনি। কারণ এই সর্বদলীয় পাথরখাগীদের নিয়ে গত এক বছরে অন্তত ষোলোটি প্রতিবেদন ও তিনটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে।

কোন কোন রাজনৈতিক দলের কোন কোন নেতা পাথর লুট করেছেন, তা সেসব প্রতিবেদনে বারবার বলে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা যে এই ইস্যুতে মাসতুতো ভাই, তা সেখানকার লোকেরা জানে। পুলিশ জানে। বিজিবি জানে। ডিসি জানেন। উপদেষ্টারাও জানেন। তাঁরা সবাই জানেন, রাজনীতির হালুয়া রুটির ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি আন্দোলন ও এনসিপির মতো সদ্যোজাত দলের বিভেদ আছে। কিন্তু পাথর লুটে তাঁদের মধ্যে সর্বদলীয় ঐক্য দেখা গেছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান খুব অসহায় ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘উপদেষ্টা হয়েও পাথর তোলা বন্ধ করতে পারলাম না।’ তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদের শাসনের সময়ও যা টিকিয়ে রাখা গিয়েছিল, গত এক বছরে তা টেকানো গেল না। সাদা পাথরের প্রায় পুরো এলাকাটাই খুঁচে নিয়ে গেছেন সর্বদলীয় পাথরখেকো বাহিনী।

পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সঙ্গে বসে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বিরাট পরিবেশ বিশেষজ্ঞর মতো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, কেন এই সব পাথর তুলে আনা অতি জরুরি। তিনি বলেছেন, ভারতের স্বার্থ পূরণ করতেই পাথর তুলতে দেওয়া হচ্ছিল না। তিনি বলেছেন, এই পাথর না তুললে নদী সংকুচিত হয়ে যায় এবং মেঘালয় থেকে আসা ঢলের পানি তখন উপচে পড়ে।

এতে দেশে বন্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বসে দেওয়া তাঁর এই মূল্যবান কথা শুনেই হয়তো বন্যার হাত থেকে দেশ বাঁচাতে পরিবেশবান্ধব লোকজন পাথর তুলে সব সাফ করে ফেলেছেন। তবে কারা কারা সাফ করলেন, আদৌ তাদের এতে কোনো আইনি অধিকার ছিল কিনা সে বিষয়ে এখনো তাঁর দিক থেকে কোনো মত আসেনি।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, পাথর তোলায় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনিসহ অনেকে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের স্বার্থে এসব পাথর তোলা দরকার ছিল। কিন্তু পাথরখাগীরা যে গোটা এলাকা সাফ করে দিলেন, তা নিয়ে কোনো আওয়াজ আসছে না।

এখানে যে হাজার হাজার পর্যটক আসতেন, তাঁদের মূল আকর্ষণ ছিল এই পাথর। এই পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে এখানে বহু পরিবার চলে। পাথর নাই হয়ে যাওয়ায় এখন পর্যটকও নাই হয়ে যাচ্ছে। এতে যে কত মানুষকে কাজ হারিয়ে পেটে পাথর বাঁধতে হবে, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন কিনা বোঝা যাচ্ছে না।  

এখন পর্যন্ত এটি পরিষ্কার, পাথর লুটপাট ঠেকানোর ক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই। সরকারের উপদেষ্টারা তা রাখঢাক না করেই স্বীকার করেছেন। অল্প কিছু রাজনৈতিক লোককে সরকার ঠেকাতে পারছে না। সরকার বলেছে, তারা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমন একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে যা ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। এই ধরনের নির্বাচন দিতে হলে সরকারের হাতে সব ধরনের মাস্তান দমনের ক্ষমতা থাকতে হয়।

এই অবস্থায় পাবলিকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে: যে সরকার পাথরখেকো সামান্য কিছু দুর্বৃত্তকে যেখানে কবজা করতে পারেনি, সেখানে তারা নির্বাচনের সময় সারা দেশের দুর্বৃত্ত সামলাবে কী করে?

আর তা যদি না পারে, তাহলে তারা স্বচ্ছ নির্বাচন করবে কী করে? যেখানে তারা পাথরচোর ঠেকাতে পারছে না, সেখানে তারা মহা শক্তিধর ভোটচোরদের ঠেকিয়ে দেবে, এই কথা বিশ্বাসে আনতে গিয়ে নিঃশ্বাস আটকে আসছে।

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

View All resone For signin

Reasons for signing.

See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).

Recent News

This petiton does not yet have any updates

Aysha Khatun

Started This Abedon.

13 August 2025   2.7 K

0 have signed. Let’s get to 85,000 !

0%
Treands

At 85,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!

Sign This

By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.

Must see setitions

অক্সিজেন প্রাপ্যতা,মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হবে

অক্সিজেন প্রাপ্যতা,মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হবে

একজন মানুষ অক্সিজেন না পেলে যেখানে তিন মিনিটের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না, সেখানে প্রয়োজনের সময় ৭০ শতাংশ মানুষের অক্সিজেন... Sign This
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, সক্ষমতাহীন ও নামসর্বস্ব সংস্থাগুলো বাদ দিন

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, সক্ষমতাহীন ও নামসর্বস্ব সংস্থাগুলো বাদ দিন

বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্ন আজ শুধু রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় নয়, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অন্যতম শর্তও। এই পরিপ্রেক্ষিতে... Sign This
চুল নিধনের ক্ষুর–কাঁচি যে কারণে বেপরোয়া

চুল নিধনের ক্ষুর–কাঁচি যে কারণে বেপরোয়া

দেশজুড়ে মাজার ভাঙা, ফকির-সাধু ব্যক্তিদের জোর করে চুল কেটে দেওয়া, নারীদের প্রতি আক্রমণ বা হেনস্তার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ... Sign This
খাগড়াছড়ির সহিংসতা,শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানো সরকারের মূল দায়িত্ব

খাগড়াছড়ির সহিংসতা,শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানো সরকারের মূল দায়িত্ব

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় তিনজন নিহত এবং সেনাসদস্য, পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার... Sign This
নামেই টিকে আছে সৈকতটি,পারকির পর্যটন প্রকল্প দ্রুত শেষ করুন

নামেই টিকে আছে সৈকতটি,পারকির পর্যটন প্রকল্প দ্রুত শেষ...

চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সৈকতের নাম একসময় একধরনের মুগ্ধতা নিয়ে উচ্চারিত হতো। ঝাউবাগানের ঘন ছায়া, সূর্যাস্তের অপার্থিব দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ—এসব... Sign This
কুমিল্লায় ফুটপাত দখল,শুধু অভিযান নয়, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা জরুরি

কুমিল্লায় ফুটপাত দখল,শুধু অভিযান নয়, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা জরুরি

দেশের ছোট–বড় সব শহরের বেশির ভাগ ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বললেই চলে। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হলো... Sign This
কৃষকদের আত্মহত্যা কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা?

কৃষকদের আত্মহত্যা কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা?

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মেহেরপুরের মুজিবনগরে সাইফুল শেখ (৫৫) পেঁয়াজখেতেই বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন। সাইফুল শেখ কেন স্বাধীনতা... Sign This
জুলাই শহীদদের তালিকা,তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন

জুলাই শহীদদের তালিকা,তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন

সরকারি নথিপত্রে যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাস বিকৃতির সবচেয়ে খারাপ ধাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায়... Sign This
১৪ মাস ধরে বেতনহীন,টেক্সটাইল শিক্ষকদের দিকে তাকান

১৪ মাস ধরে বেতনহীন,টেক্সটাইল শিক্ষকদের দিকে তাকান

একটা রাষ্ট্রের উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কিছু মানদণ্ড আছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসম্পন্ন যুগোপযোগী শিক্ষার প্রসার করা। শিক্ষকদের দুর্বল... Sign This
জাহাজভাঙা শিল্প ‘দাসত্বের জীবন’ থেকে কি শ্রমিকের মুক্তি নেই?

জাহাজভাঙা শিল্প ‘দাসত্বের জীবন’ থেকে কি শ্রমিকের মুক্তি...

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত জাহাজভাঙা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ খাত। প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসে এই... Sign This
Loading