বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রান্তিক ও নাজুক জনগোষ্ঠীর একটি চা–শ্রমিক, যাঁরা বংশপরম্পরায় চূড়ান্ত রকমের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। চুক্তিভিত্তিক শ্রমের মাধ্যমে বংশপরম্পরায় চা–বাগানের সঙ্গে তাঁদের বাঁধা পড়ার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ‘আধা দাসতন্ত্র’ বলা যায়।
বহু বছরের আন্দোলনের ফসল হিসেবে একজন চা–শ্রমিক বর্তমানে দৈনিক ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা মজুরি পান। কিন্তু বাংলাদেশের যেকোনো খাতের তুলনায় এটা সর্বনিম্ন মজুরি। এ বাস্তবতায় অর্থনীতিবিদেরা এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
সীমাহীন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ করা সরকারি অনুদান যখন বেহাত হয়ে যায়, তার চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। খবর জানাচ্ছে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানে ২৪৯ শ্রমিককে এককালীন সরকারি অনুদান ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও বিতরণের তালিকায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য, শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও তাঁদের পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি কয়েকজন চা-শ্রমিক অনুদান বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দেন বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। ইউনিয়ন পরিষদের গঠিত তদন্ত কমিটি এর সত্যতা পায়। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তালিকায় নাম তুলতে শ্রমিকদের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়া হয়েছে। আবার কারও নাম তালিকায় থাকলেও তাঁরা টাকা পাননি; অন্যদিকে তালিকায় নাম না থাকা একাধিক ব্যক্তি এ অনুদান পেয়েছেন।
ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা, যেমন ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড চা–বাগানে কাজ করানোর জন্য এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে এই জনগোষ্ঠীর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পরিবার নিয়ে বিভিন্ন চা–বাগানে বাস করছেন। তাঁদের অধিকাংশেরই জমি নেই, থাকেন কোম্পানির শ্রমিক কলোনিতে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপদ পানির মতো সেবা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত।
এটা বলতেই হয় যে অবহেলিত ও বঞ্চনার শিকার চা-জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার যে অনুদান দেয়, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সেই সামান্য হক থেকেও তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন?
আমরা আশা করি, বরমচাল চা-বাগানের শ্রমিকদের অভিযোগ ও ইউনিয়ন পরিষদের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অর্থ যাতে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায়, সরকারকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে। চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান বাজার ও জীবনযাত্রার ব্যয় অনুযায়ী ন্যায্য মজুরিই টেকসই সমাধান।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).