২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালুর পর আধুনিক এই গণপরিবহনব্যবস্থা ঢাকার একটা অংশের নাগরিকদের জন্য নির্ভরতার কারণ হয়ে উঠেছে। নির্মাণব্যয় ব্যয়বহুল হওয়ার পরও সেবা ও স্বস্তি মিলিয়ে মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের ধারণা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু রোববার দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার ও ভায়াডাক্টের মাঝখানে বসানো একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে মাথায় পড়ে যেভাবে এক তরুণের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে ও দুজন আহত হয়েছেন, তাতে অন্যান্য গণপরিবহনব্যবস্থার মতো মেট্রোরেলের নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়েও জনমনে সংশয় ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরেও ফার্মগেট এলাকায় আরেকটি পিলার থেকে সেটি খুলে পড়েছিল। সৌভাগ্যবশত সেবার কেউ হতাহত হননি।
প্রথমবারের ঘটনায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যদি সচেতন হতো এবং এটি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিত, তাহলে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ আবুল কালামের এমন অকালমৃত্যু দেখতে হতো না। এটিও প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলাজনিত মৃত্যুর আরও একটি দৃষ্টান্ত। তাঁর ছোট দুটি সন্তান, স্ত্রী ও স্বজনদের কাছে এই মৃত্যুর সান্ত্বনা কী?
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পাঁচ লাখ টাকা অর্থসহায়তা ও পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিকে যোগ্যতা অনুযায়ী মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, এই মৃত্যুর দায় নিয়েই রাষ্ট্রকে আবুল কালামের পরিবারকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে তারা প্রতিবেদন জমা দেবে। বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার আগের তদন্ত প্রতিবেদনও তারা পর্যালোচনা করে দেখবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আগের প্রতিবেদনে যে সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল কি? যদি সেটা বাস্তবায়ন না করা হয়ে থাকে, সেখানে কাদের গাফিলতি রয়েছে, সেটা অবশ্যই বের করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বড় কোনো দুর্ঘটনা আর নাগরিকের প্রাণহানি হলেই কেবল সতর্ক হওয়ার যে আমলাতান্ত্রিক চর্চা, অবশ্যই তার অবসান হতে হবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হচ্ছে, যে স্থানে দুবার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছে, সে জায়গায় বড় বাঁক রয়েছে। এ ছাড়া স্থানটি অন্য জায়গা থেকে কিছুটা উঁচুও। কিন্তু বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামসুল হক মনে করেন, বাঁক বা উঁচু হওয়া প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জের বিষয়, এর কারণে বিয়ারিং প্যাড খুলে নাগরিকের মৃত্যু হতে পারে না। এখানে নকশাগত ত্রুটি আছে বলেই মনে করেন তিনি।
মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারে নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয় আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এত ব্যয়ের পরও কেন মেট্রোরেলে নিরাপত্তাঝুঁকি থাকবে? এ ক্ষেত্রে জাপানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এনকেডিএমের কোনো দায় ও গাফিলতি আছে কি না, সেটাও তদন্ত করা প্রয়োজন।
২০২০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, মেট্রোরেল প্রকল্পে মানহীন বিয়ারিং প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আশা করি, তদন্ত কমিটি এই অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
মেট্রোরেল এখন ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণে মেট্রোরেলের চলাচল ব্যাহত হয়, তাতে রবি ও সোমবার ঢাকায় যানজটের তীব্রতা বাড়ে। আধুনিক এই নগর গণপরিবহনে নিরাপত্তাঝুঁকির প্রশ্নটি সারা বিশ্বেই বিরল একটা বিষয়। বাংলাদেশ কেন এর ব্যতিক্রম হবে? নিয়মিত তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) গাফিলতি, দায়িত্বে শিথিলতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 10,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).