বাংলাদেশের নাগরিকের জীবন যে কতটা মূল্যহীন, রেলক্রসিংয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল তার একটা বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এর সর্বশেষ ঘটনাটি দেখা গেল কক্সবাজারের রামুতে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় মা, দুই ছেলেসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এটি কোনোভাবেই দুর্ঘটনা নয়, অবহেলাজনিত মৃত্যু ও কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। আর এ হত্যাকাণ্ড বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষগুলোর চোখের সামনেই।
খবর জানাচ্ছে, শনিবার দুপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রেন রামু উপজেলার রশিদনগরের ধলিরছড়া রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় রেললাইনের ওপর উঠে পড়া সিনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। অটোরিকশাটিকে ট্রেনটি এক কিলোমিটারের বেশি দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। এতে এক পরিবারের চারজন ও চালক নিহত হন। অটোরিকশাটিকে ট্রেনটি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, পাঁচজনের মৃত্যু কতটা মর্মান্তিকভাবে ঘটেছে, তা সহজেই অনুমেয়।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা এ রুটে চলাচলকারী আরেকটি ট্রেন আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোয় গেট স্থাপন করে গেটম্যান দেওয়ার দাবি জানান। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে রেলওয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছে। প্রশ্ন হলো, পাঁচজন মানুষের প্রাণ হারানোর দায়টা আসলে কার, আর রেলক্রসিং সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার দায়িত্ব কে নেবে?
বাংলাদেশে রেললাইনে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বছরে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশ মৃত্যুই রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার কারণে ঘটে। রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে এমন একটা ধারণা জন্মেছে যে রেলক্রসিংয়ে যানবাহন চাপা পড়ে প্রাণহানির দায় তাদের নয়। কারণ, বেশির ভাগ সংস্থা সড়ক নির্মাণের সময় তাদের অনুমতি নেয়নি। কিন্তু ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, রেলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করা ‘বৈধ’ রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৬১.৫৮ শতাংশই অরক্ষিত। গত ছয় বছরে এ পরিস্থিতির খুব কি বেশি উন্নতি হয়েছে?
সড়ক ও রেল—অবকাঠামো খাতের দুই যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যে কতটা সমন্বয়হীনতা ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি গেড়ে বসেছে, রেলক্রসিংয়ে মৃত্যু তার প্রামাণ্য হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা যত বাড়ছে, যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তত বাড়ছে। কিন্তু রেলওয়ে নিজেদের মতো রেলপথ নির্মাণ করছে। আবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থা সড়ক নির্মাণ করেছে। কিন্তু নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি সবাই উপেক্ষা করছে। প্রকৃতপক্ষ সব কটি সংস্থার অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে যতটা আগ্রহ, নাগরিকের সুরক্ষার প্রশ্নে ততটাই অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি থামছেই না।
নাগরিকের জীবনের মূল্য যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সরকার ও সংস্থাগুলোর কাছে অমূল্য বলে মনে হবে না, তত দিন এ ধরনের কাঠামোগত হত্যা কি বন্ধ হবে?
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).
This petiton does not yet have any updates
At 75,000 signatures, this petition becomes one of the top signed on amarabedon.com!
By signing you are agree to the followingTerms & Condition and Privacy Policy.
Reasons for signing.
See why other supporters are signing, why this petition is important to them, and share your reason for signing (this will mean a lot to the starter of the petition).